স্টাফ রিপোর্টার: অনন্ত যাত্রার পথে বাংলাদেশের কোলে ফিরেছেন কিংবদন্তি সাংবাদিক সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার। স্বজন ও সহকর্মীরা মঙ্গলবার রাত ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রহণ করেন তার নিথর দেহ। বুধবার তাকে নেওয়া হবে তার জন্মস্থান সন্ধ্যা নদী তীরের গ্রাম বানারীপাড়ায়। শোকার্ত সহকর্মী, সহযোদ্ধা, সুহৃদ ও সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বৃহস্পতিবার তিনি শেষ শয্যা নেবেন মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে।
সবাই আশাবাদী ছিলেন, মৃত্যুকে আরেকবার পরাজিত করে সুস্থ শরীরে সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে আসবেন আজীবন সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে লড়াই করা সাংবাদিকতার বাতিঘর গোলাম সারওয়ার। ফিরে আসবেন তার প্রিয় সমকালে, তুলে নেবেন কলম। কিন্তু সবার দোয়া, শুভকামনা ও চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে সোমবার সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ২৫ মিনিটে মহাসিন্ধুর ওপারে পাড়ি জমান মুক্তিসংগ্রামী গোলাম সারওয়ার।
নিউমোনিয়া ও ফুসফুসের সংক্রমণ ঘটার পর গত ২৯ জুলাই রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি হন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি গোলাম সারওয়ার। অবস্থার অবনতি হলে ৭৫ বছর বয়সী এই সাংবাদিককে গত ৩ আগস্ট নেওয়া হয় সিঙ্গাপুরে।
সেখান থেকে মঙ্গলবার রাত ১০টা ৫০ মিনিটে শেষবারের মতো দেশে ফেরেন সমকাল সম্পাদক। বিমানবন্দরে শোকার্ত সহকর্মী-স্বজনরা তার মরদেহবাহী কফিন গ্রহণ করেন। ৫৭ বছরের সুদীর্ঘ সাংবাদিকতায় বিপুল অর্জন, পরিণত বয়সে প্রয়াণ- তবু তার চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছিলেন না সহকর্মীরা। অভিভাবকের ছায়া মাথার ওপর থেকে সরে যাওয়ার ব্যথা কাঁদায় সবাইকে।
প্রিয় সম্পাদকের মরদেহ গ্রহণ করেন সমকালের প্রকাশক এ. কে. আজাদ। সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) এস এম শাহাব উদ্দিন, উপসম্পাদক অজয় দাশ গুপ্ত ও আবু সাঈদ খান, নগর সম্পাদক শাহেদ চৌধুরী, প্রধান প্রতিবেদক লোটন একরাম, ফিচার সম্পাদক মাহবুব আজীজ, বার্তা সম্পাদক (অনলাইন) গৌতম বি. মণ্ডল, সহকারী সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম আবেদ, যুগ্ম বার্তা সম্পাদক রমা প্রসাদ বাবু, জিএম (সার্কুলেশন) মো. হারুনুর রশিদসহ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা প্রিয় সম্পাদকের মরদেহ নিয়ে যান তার উত্তরার বাসভবনে। এ সময় পিআইবির মহাপরিচালক শাহ আলমগীরসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
সিঙ্গাপুর থেকে গোলাম সারওয়ারের মরদেহের সঙ্গে একই বিমানে দেশে ফেরেন স্ত্রী সালেহা সারওয়ার, কন্যা সুষমা নাইম রত্না, জামাতা মিয়া নাইম হাবিব, পুত্র গোলাম শাহরিয়ার রঞ্জন ও গোলাম সাব্বির অঞ্জন।
বিমানবন্দর থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় গোলাম সারওয়ারের বাসায়। ১৯৭৭ সাল থেকে উত্তরায় বসবাস গোলাম সারওয়ারের। উত্তরা মডেল হাই স্কুল ও কলেজের সভাপতি ছিলেন তিনি। উত্তরায় নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। প্রতিবেশীরাও তাকে শেষবারের মতো দেখতে আসেন। শোকার্ত মানুষের হাহাকারে ভাঙে মধ্যরাতের নীরবতা।
বাসভবন থেকে সমকাল সম্পাদকের মরদেহ নেওয়া হয় বারডেমের হিমঘরে। সেখান থেকে বুধবার দুপুর দেড়টায় হেলিকপ্টারে করে তার মরদেহ নেওয়া হবে বরিশালের বানারীপাড়ায়। বড় সন্তান গোলাম সারওয়ারকে আদর করে তার মা ডাকতেন দুলাল বলে। গ্রামের মানুষের কাছে তিনি প্রিয় দুলাল হয়েই আছেন।
বুধবার দুপুর আড়াইটায় বানারীপাড়া সরকারি মডেল ইনস্টিটিউশন মাঠে গোলাম সারওয়ারের প্রথম জানাজা হবে। একাত্তরের রণাঙ্গনের যোদ্ধা গোলাম সারওয়ার মুক্তিযুদ্ধের পর কয়েক মাস এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। জানাজা শেষে তাকে আবারও ঢাকায় আনা হবে। বুধবার রাতেও মরদেহ রাখা হবে বারডেমের হিমঘরে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় গোলাম সারওয়ারের মরদেহ নিয়ে আসা হবে তার প্রিয় কর্মস্থল সমকাল কার্যালয়ে। এখানে সহকর্মীদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
এরপর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় সকাল ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সমকাল সম্পাদকের মরদেহ সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধার জন্য রাখা হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।
শ্রদ্ধা জানানোর পর সেখান থেকে দেশবরেণ্য এই সাংবাদিকের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে। দীর্ঘ কর্মময় জীবনের অনেকটা সময় তিনি কাটিয়েছেন তার এই প্রিয় প্রতিষ্ঠানে। সংবাদকর্মীরা সেখানে গোলাম সারওয়ারের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। বাদ জোহর তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বাদ আসর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন তিনি।