সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৭ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক: রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় দায়ে মিয়ানমারের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে জাতিসংঘের স্বাধীন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমার।আজ বুধবার মিয়ানমারের তরফ থেকে জাতিসংঘ মিশনের ওই তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জাও হতেই এক বিবৃতিতে বলেন, আমরা এফএফএম (দ্য ইউএন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন) সংস্থাকে মিয়ানমারে প্রবেশের অনুমতি দেইনি। তাই মানবাধিকার সংস্থার কোনো বিশ্লেষণী প্রতিবেদন আমরা গ্রহণ করছি না এবং তাদের কোনো সমাধানও মেনে নিচ্ছি না।
তিনি এ ক্ষেত্রে মিয়ানমারের নিজস্ব ইন্ডিপেন্ডেন্ট কমিশন অব ইনকোয়ারির কথা বলেছেন। জাতিসংঘের সংস্থা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মিথ্যা অভিযোগের বিরুদ্ধে তাদের এ সংস্থা সাড়া দেবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।সোমবার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ‘গণহত্যার অভিপ্রায়’ থেকেই রাখাইনের অভিযানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। আর মিয়ানমারের নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চির বেসামরিক সরকার ‘বিদ্বেষমূলক প্রচারকে উসকে’ দিয়ে, গুরুত্বপূর্ণ ‘আলামত ধ্বংস’ করে এবং সেনাবাহিনীর মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রক্ষা না করে সেই নৃশংসতায় ‘ভূমিকা’ রেখেছে। আইন প্রয়োগের নামে ভয়ঙ্কর ওই অপরাধ সংঘটনের জন্য মিয়ানমারের সেনাপ্রধান এবং জ্যেষ্ঠ ৫ জেনারেলকে বিচারের মুখোমুখি করার সুপারিশ করা হয়েছে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনে। ওই প্রতিবেদন নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা শুরুর পর এই প্রথম মিয়ানমার সরকারের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এলো।আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার চলতি বছরের শুরুতে রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে চার সদস্যের ওই কমিশন গঠনের ঘোষণা দেয়। স্থানীয় দুজনের সঙ্গে ওই কমিশনে সদস্য হিসেবে আছেন ফিলিপিনো কূটনীতিক রোজারিও মানালো ও জাতিসংঘে জাপানের সাবেক রাষ্ট্রদূত কেনজো ওশিমা। রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করে মিয়ানমার সরকার বরাবরই বলে আসছে, তাদের ওই অভিযান রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে, যারা গত জুনে কয়েকডজন পুলিশ পোস্টে হামলা করেছিল।সু চি সরকারের মুখপাত্র বলেন, ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো ঘটনা যদি থাকে, আমাদের প্রমাণ দিন, রেকর্ড দিন, তারিখ বলুন, যাতে আমরা আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি।’জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদন প্রকাশের দিনই ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানায়, বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী প্রধানসহ শীর্ষ জেনারেলদের পৃষ্ঠা তারা বন্ধ করে দিচ্ছে।গ্লোবাল নিউজ লাইট অব মিয়ানমারের প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে জ হাতোই বলেন, মিয়ানমার সরকার কারো ফেসবুক বন্ধ করতে বলেনি। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ওই পদক্ষেপ নিয়ে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে।গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কিছু চৌকিতে সন্ত্রাসী সংগঠন আরসার হামলার পর রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে শুরু হয় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তাণ্ডব। প্রাণ বাঁচাতে মরিয়া রোহিঙ্গাদের ঢল শুরু হয় বাংলাদেশে। নির্বিচারে গ্রাম পোড়ানো, হত্যা আর ধর্ষণের ভয়াবহ বর্ণনা দিয়েছেন তারা। কক্সবাজারে এখন নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৭৬। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের ঢলের পর থেকে এসেছে ৭ লাখ ২ হাজার। আর ২০১৬ সালের অক্টোবরের পরের কয়েক মাসে এসেছিল ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা। অন্যরা আগে থেকেই অবস্থান করছে বাংলাদেশে।