শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ০৪:৩১ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
শেখ এশিয়া লিমিটেডের জায়গা-জমির কিছু অংশ জোর পূর্বক দখল করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন বেনজীর দোষী সাব্যস্ত হলে দেশে ফিরতেই হবে: কাদের কথা, কবিতা,সংগীত ও নৃত্যে রবীন্দ্র -নজরুল জয়ন্তী ১৪৩১ উদযাপন ডেঙ্গু : মে মাসে ১১ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৬৪৪ প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হতে পারে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা ফখরুল ইসলাম প্রিন্স নওগাঁর মান্দায় নিয়ম-বহির্ভূত রেজুলেশন ছাড়াই উপজেলার একটি প্রাথমিক স্কুলের টিন বিক্রির অভিযোগ আর্তনাদ করা সেই পরিবারের পাসে IGNITE THE NATION ঘূর্ণিঝড় রেমালের তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত শরণখোলা ও সুন্দরবন নওগাঁর শৈলগাছী ইউনিয়ন পরিষদের ২০২০০৪-২০২৫ অর্থবছরের উন্মুক্ত বাজেট ঘোষণা নরসিংদী মেহেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানকে কুপিয়ে হত্যা
প্রান্তই যখন মৃত্যুর ঠিকানা

প্রান্তই যখন মৃত্যুর ঠিকানা

ক্রীড়া ডেস্কঃ লিটন দাশকে যখন টেস্টে ইনিংসের গোড়াপত্তনের সুযোগটা দেওয়া হলো, সেই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে অধিনায়ক মাহমুদ উল্লাহ বলেছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানের সাবলীল স্ট্রোক খেলার কথা। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মসৃণ ঘাস, প্রাকৃতিক ঢাল আর নতুন বলের চকচকে শরীর, বল ব্যাটে আসছে—এমন উইকেটই তো স্ট্রোক খেলার জন্য আদর্শ। কিন্তু লিটন করলেন ঠিক উল্টো। কাইল জারভিসের অফস্টাম্পের বাইরে করা বলটায় খেলব কি খেলব না করতে করতে হালকা টোকা। বল গেল উইকেটের পেছনে রেগিস চাকাভার গ্লাভসে। শুধু লিটন একা নন, কাল বাংলাদেশের যে ৯ জন ব্যাটসম্যান বোলারদের উইকেট দিয়েছেন, তাঁরা কেউই শট খেলতে গিয়ে আউট হননি। বরং দ্বিধাগ্রস্ত ব্যাটিংয়ের উদাহরণ গড়ে আউট হয়েছেন ব্যাটের বাইরের বা ভেতরের কানায় বল লাগিয়ে। ব্যাটের কানায় লেগে বল গেছে ফিল্ডারের হাতে অথবা ভেঙেছে স্টাম্প।

ওয়ানডে সিরিজে দারুণ ফর্মে থাকা ইমরুল কায়েসের ভাগ্যটা বদলে গেল বল আর পোশাকের রংবদলের সঙ্গে সঙ্গে। তিন ওয়ানডেতে শুধু দ্বিতীয়টিতে শতরান করতে পারেননি, আউট হয়ে গিয়েছিলেন ৮ রান দূরে। সেই ইমরুলই সিলেট স্টেডিয়ামে আউট হওয়া প্রথম ব্যাটসম্যান। টেন্ডাই চাতারার বলে ইনসাইড এজ হয়ে আউট ৫ রানে। বাঁহাতি ইমরুল আউট হয়েছেন ব্যাটের ভেতরের কানায় বল লাগিয়ে বোল্ড হয়ে আর ডানহাতি লিটন ব্যাটের বাইরের দিকের কানায় বল লাগিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। ইনিংসের সূচনা করা দুজনকেই অনুসরণ করেছেন পরের ব্যাটসম্যানরা! ওয়ান ডাউনে নামা নাজমুল হোসেন শান্তও পা না নড়িয়ে শরীরের অনেক বাইরের বলে ব্যাটের আলতো ছোঁয়া লাগিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে। বোলার টেন্ডাই চাতারা নিশ্চিত ছিলেন না বল ব্যাটে লেগেছে কি লাগেনি, তবে সমস্বরে রব উঠেছিল স্লিপ কর্ডনের ফিল্ডারদের। রিভিউ নেন হ্যামিলটন মাসাকাদজা, স্নিকো মিটার দেখিয়ে দেয় বল ব্যাটের বাইরের কানায় আলতো ঘষা খেয়ে মৃদু শব্দ তুলে জমা পড়ে চাকাভার গ্লাভসে।

১ বল পর, অধিনায়ক মাহমুদের শূন্য রানে আউট হওয়ার দৃশ্যটি ছিল রীতিমতো কুিসত ব্যাটিং এবং দায়িত্বহীনতার প্রদর্শনী!

ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে আউট হয়েছিলেন শূন্য রানে, পরের দুটি ওয়ানডেতে ব্যাটই করতে হয়নি, কাল আবার শূন্য। সব মিলিয়ে জিম্বাবুয়ের বাংলাদেশ সফরে মাহমুদের এখন পর্যন্ত মোট রান ০! নাজমুলের বিদায়ের ১ বল পরেই সিমের ওপর করা চাতারার আরেকটি ডেলিভারি, চমত্কার কোণ সৃষ্টি করে বলটা করেছিলেন এই ডানহাতি পেসার। মাহমুদ বলটা খেলবেন না ছাড়বেন, এই দ্বিধায় সিদ্ধান্ত নিতে করলেন দেরি আর বলটা তাঁর ব্যাটের ভেতরের কানায় লেগে ভেঙে দিল স্টাম্প।

কাল বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানের ভুলগুলো যে সব ফুল হয়ে ফুটল, সেই ফুল কিন্তু খুব বেশি দূর পাঁপড়ি মেলেনি। কানায় লেগে বোল্ড হয়েছেন দুজন, একজন রান আউট। বাকি যাঁরা ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন, তাঁরা কেউই শট খেলতে গিয়ে আউট হননি, যে দুর্নামটা প্রায়ই তাঁদের শুনতে হয়। এমন নয় মুশফিক তাঁর প্রিয় স্লগসুইপ খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন ডিপ মিড উইকেটে, কাভার ড্রাইভ করতে গিয়ে হালকা হাওয়া ভাসিয়ে সরাসরি ফিল্ডারের হাতে বল তুলে দিয়েছেন লিটন দাশ অথবা লেগস্পিনারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন আরিফুল হক। সবাই আউট হয়েছেন ব্যাটের কানায় বল লাগিয়ে। সিকান্দার রাজার অফস্পিনে হালকা পুশ করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন মমিনুল হক, জারভিসের বলে বাউন্ডারি মারার পরের ডেলিভারিটা একটু বেশি লাফিয়ে ওঠায় ভালোভাবেই ছুঁয়ে যায় মুশফিকের ব্যাটের কানা। এশিয়া কাপে পাকিস্তানের সঙ্গে ৯৯ রানে আউট হওয়ার দুঃসহ স্মৃতি মুশফিক ফিরিয়ে আনেন দুবাই থেকে অনেক দূরের সিলেটেও। মেহেদী মিরাজ তাও বলটা আরেকটু দূরে পাঠিয়েছেন, কমপক্ষে ২২ গজ! শন উইলিয়ামসের বলে ফ্লিক করতে গিয়েছিলেন, বলে একটু বাড়তি বাউন্স থাকায় ব্যাটের সামনের কানায় লেগে উঠে যায় ওপরে। ফিরতি ক্যাচটি নিজেই ধরেন উইলিয়ামস। তাইজুলও ব্যাটের বাইরের কানায় বল লাগিয়ে পাঠিয়েছেন উইকেটরক্ষকের হাতে, নাজমুল ইসলাম হালকা টোকায় ক্যাচ দিয়েছেন সিলি পয়েন্টে।

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ভেতর যাঁরা ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন, মাঠের মানচিত্রে সেই ক্যাচ ধরার জায়গাগুলোতে বিন্দু আঁকলে দেখা যাবে, ঠিক যেন মেলে ধরা ছাতার মতোই সবাই ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের আশপাশে। বোঝাই যাচ্ছে, তাঁদের ব্যাটের প্রান্তসীমাই ব্যাটসম্যানদের পৌঁছে দিয়েছে মৃত্যুর ঠিকানায়। যার মানে দাঁড়ায়, খোলা মনে ব্যাট করার পরিবর্তে অতিরিক্ত সাবধানী হয়েই তাঁরা নেমেছিলেন ২২ গজে। মাথার ভেতর ছিল রাজ্যের দ্বিধা। অন্যদিকে শুরুর সাফল্য জিম্বাবুয়ের বোলারদের আরো অনুপ্রাণিত করেছে একইভাবে বল করে যেতে, যেদিকটায় জোর দিয়েছেন তাদের বোলিং কোচ ডগলাস হন্ডোও, ‘বোলাররা সঠিক জায়গায় বল করে চাপ তৈরি করেছে, ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করেই ফল আদায় করতে হবে।’

শুরুতে চাতারা-জারভিসরা যে চাপটা তৈরি করেছিলেন, সেটা ধরে রেখেছিলেন সিকান্দার রাজা। সেই চাপের ফাঁসেই দম আটকে ২২ গজে ভুলের ফুল ফুটিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com