মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১৮ অপরাহ্ন

শুরু হচ্ছে দুবলার চরে রাস উৎসব

শুরু হচ্ছে দুবলার চরে রাস উৎসব

ফিরোজ আহম্মেদ, মোংলা প্রতিনিধি‍ঃ সুন্দরবনের দুবলার চরে ২১ নভেম্বর, মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ও উৎসবকে কেন্দ্র করে সেখানে বসবে সব ধর্মের মিলন মেলা। দেশী-বিদেশী হাজার হাজার দর্শনার্থীর আগমনে রাসমেলা মেলা হয়ে উঠবে ভক্তদের উৎসবমুখর পরিবেশ। ইতো মধ্যে সকল প্রস্তুতি শেষ করেছে রাসম্যালার আয়োজক কমিটি। হরিন শিকার, কাঠ পাচার ও বন্য প্রানী পাচার রোধে বন বিভাগসহ প্রসাশনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যাবস্থা। জারি করা হয়েছে স্বঘোশিত রেট এলার্ট। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা রক্ষায় বন বিভাগের পাশাপাশি র‌্যাব, নৌবাহিনী,কোষ্টগার্ড,পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা টহল কার্যক্রম চালাবে রাস মেলায়।
বন বিভাগ ও রাস উৎসব আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা যায়, কয়েক শত বছর ধরে বঙ্গোপসাগরের পাড়ে সুন্দরবনের দুবলার চরে আলোরকোল এলাকায় এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। কার্তিক মাসের শেষে বা অগ্রহায়ণের প্রথম দিকের ভরা পূর্ণিমার তিথিতে এ রাস উৎসব উদযাপিত হয়। শুক্লপক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ পার্থিব জীবনের কামনা বাসনা পূরণের লক্ষ্যে সুন্দরবনের শেষ প্রান্তে বঙ্গোপসাগরের তীরে দুবলার চরে এক নিবিড় পরিবেশে সমবেত হন। পূর্ণিমার জোয়ারের নোনাজলে স্নান করে পাপমোচন হবে এমন বিশ্বাস নিয়ে হিন্দু সম্প্রদয়ের ধর্মাবলম্বীরা রাস উৎসবে যোগ দিলেও কালের বিবর্তনে এখন তা নানা ধর্ম-বর্নের লোকদের উৎসবে পরিণত হয় আলোরকোলে। সেখানে সূর্যদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রস্নান করতে ঈশ্বরের প্রতিতি আরতী জানায়। অসংখ্য হিন্দু নর-নারী গঙ্গাসাগরে মেলার মতো তীর্থস্থান মনে করে এ মেলায় উপস্থিত হন। আবার কেউ কেউ পাপ মোচন হবে মনে করে এ স্থানে আসেন এবং সমুদ্রের ঢেউয়ে স্নান করেন। এসময় ঢেউ সেবনের মন্ত্র উচ্চারণ করে পাঁঠা বলি, ফল ও মিষ্টি সাগরে নিক্ষেপ করতে দেখা যায় ভক্তদের।
সুন্দরবনের দুবলা ফরেষ্ট ষ্টেশন থেকে জানায়, দুবলার চরের এ মেলায় লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকাযোগে তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীরা এসে সমবেত হয়েছে দেশের প্রত্যান্ত এলাকা থেকে। একই সঙ্গে অসংখ্য বিদেশি পর্যটকও আসবে। উৎসবের সময় কুটির শিল্পের বিভিন্ন মালের পসরা সাজিয়ে বসে একশ্রেণির ব্যবসায়ী। এ ছাড়া নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়।
মংলার বেসরকারি পর্যটন কোম্পানি সাউদার্ন টুর’র পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান জানান, রাস উৎসবে যোগ দিতে এরই মধ্যে অনেক পর্যটক লঞ্চ, স্পিডবোট,জালিবোর্ট ও ট্রালার সমুহ বুকিং করার কাজ সম্পুর্ন করেছে এ রাস উৎসবের জন্য।
রাস মেলা উৎসবের আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক কামাল উদ্দিন জানান,আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে এবার বেশ জমজমাটভাবে রাসমেলা উদযাপনের প্রস্তুতি সম্পুর্ন করা হয়েছে। তবে এ রাসমেলায় মংলাসহ সুন্দরবনের আটটি পয়েন্ট দিয়ে তীর্থযাত্রিদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে বন বিভাগের পক্ষ থেকে। এসব পয়েন্ট দিয়ে অসংখ্য নৌকা,ট্রলারে লঞ্জ বিভিন নৌযানে করে হাজার হাজার দর্শনার্থী আলোরকোলের উদ্দেশে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে প্রবেশ করবেন। কামাল উদ্দিন আরো বলেন, মেলায় প্রবেশকারীদের নির্দিষ্ট ফি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দিয়ে বন বিভাগের কাছ থেকে অনুমতিপত্র নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তত্ত্বাবধানে থাকবে পুরো মেলার এলাকা। তার অপ্রতিকার বা নাশকতার কোন ঘটনা ঘটাতে না পারে সে ব্যাপারে সব দিকেই নজর রাখবেন তারা। এদিকে, রাস উৎসব সামনে রেখে দর্শনার্থীর ছদ্মবেশে চোরাশিকারির দল হরিণ শিকারের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। তবে হরিণ শিকার রোধ ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে বলে বন বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বন বিভাগ জানিয়েছে, সুন্দরবনজুড়ে বন বিভাগ, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে জারি করা হবে অঘোষিত রেড অ্যালার্ট। হরিণ শিকাররোধে এরই মধ্যে বনের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়েছে বন বিভাগের ১২টি দল। এ ছাড়া বনে প্রবেশের ক্ষেত্রে বন বিভাগ বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে।
পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ শাহিন কবির জানান, রাসমেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন ও এর নিরাপত্তায় বন বিভাগ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এবারও দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রীদের জানমালের নিরাপত্তাসহ হরিণ শিকাররোধে বনরক্ষীদের পাশাপাশি মেলায় র‌্যাব, কোস্টগার্ড ও পুলিশের টহল থাকছে। এ ছাড়া মেলায় চোরাশিকারিদের রুখতে দর্শনার্থীদের আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য বহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে পুণ্যস্নানের সময় কোনো পটকা ফোটানোও। এ ব্যাপারে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মাহমুদ হাসান জানান, ২১ নভেম্বর শুরু হতে যাচ্ছে বঙ্গোপসাগর পারে রাস উৎসব, যা আগামী ২৩ নভেম্বর শেষ হবে এবারের রাস উৎসব। এ রাসমেলায় কোনোভাবেই যেন হরিণ শিকার,বন্য প্রানী পাচার ও বনজ সম্পদের ক্ষতি না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় সব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এ বছর দর্শনার্থীদের জ্বালানি কাঠ সুন্দরবন থেকে সংগ্রহের অনুমতি দেওয়া হবে না। তীর্থযাত্রীরা কোনোরকম বনজ সম্পদ যাতে বিনষ্ট করতে না পারেন, সে জন্য নেওয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com