শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪৯ পূর্বাহ্ন
উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী এ ছাত্র সংগঠনটির নতুন নেতৃত্ব আগামী ৩১ মার্চ এবং ১ এপ্রিল এ সম্মেলনের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে। তবে এবারের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে বয়সসীমা আবারো পরিবর্তন হতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
গঠনতন্ত্রের ধারা ৫-এর ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সর্বোচ্চ বয়সসীমা ২৭ থাকলেও ২৯ বছরের মধ্যেই নেতৃত্ব নির্বাচনের বিষয়টি চূড়ান্ত ছিল এতদিন। আগামী সম্মেলনে তা বাড়িয়ে ৩০ করা হতে পারে বলে জানা গেছে। এছাড়া শীর্ষ ৪ নেতৃত্বে কমপক্ষে ১ জন নারী নেতৃত্বও উঠে আসতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।
আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত ২ কারণে এবারের সম্মেলন শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচনে বয়স বাড়ানো হতে পারে। আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জানিয়েছেন, এ বছর সরকারের জন্য নির্বাচনের বছর। এদিক বিবেচনায় ছাত্রলীগের মতো বৃহৎ এবং গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনের নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের বেশ সতর্ক। ক্লিন ইমেজে, নেতৃত্বদানে পরিপক্কতা এবং সাংগঠনিক দক্ষতার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হতে পারে।
নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বের বয়সসীমা আরো এক বছর বাড়তে পারে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে, ছাত্রলীগে বয়সসীমা নিয়ে সাবেক নেতাদের একটি বড় অংশের দাবি, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি ‘ম্যাচিউরড’ (পরিপক্ব) কমিটি। সেক্ষেত্রে এবারও বয়সসীমা ২৯ থেকে এক বছর বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। আবার সময় মতো সম্মেলন না হওয়ায় যারা বয়স খুঁইয়েছেন তাদের দাবি- বর্তমান কমিটির মেয়াদ দুই বছর পূর্তির দিন থেকে বয়সের হিসাব করার।
সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৬ ও ২৭ জুলাই ২৮তম জাতীয় সম্মেলনে দুই বছর মেয়াদে সাইফুর রহমান সোহাগকে সভাপতি ও এস এম জাকির হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ্য, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১১(খ) ধারায় কমিটির মেয়াদ দুই বছর উল্লেখ রয়েছে। সেই দিক বিবেচনায় এই কমিটির মেয়াদ গত বছরের ২৬ জুলাই শেষ। মেয়াদ শেষ হওয়ার কিছুদিন আগে এক সাধারণ সভায় কমিটির গঠনতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতা মেনে চলা নিয়ে সিনিয়র নেতৃবৃন্দের মধ্যে বিতর্ক দেখা দেয়। তারই রেশ ধরে বিভিন্ন সময়ে সম্মেলনের কথা হয়ে আসছিল এবং সর্বশেষ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালি আয়োজনের আগের অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের মাদার সংগঠন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার বরাত দিয়ে স্বাধীনতার মাসে অর্থাৎ মার্চ মাসে সম্মেলন আয়োজনের নির্দেশ দেন। এরপরই বিভিন্ন মহলে বয়সের বিষয়টা নিয়ে একটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
মাঠ পর্যায়ের অনুসন্ধানী রিপোর্টে জানা যায় বয়স নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা রয়েছে। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ৫(ক) ধারা অনুযায়ী গত বছরের ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে যাদের বয়স ২৭ তারা যোগ্য প্রার্থী হিসাবে গণ্য হবেন। তবে গত কিছুদিনধরে কয়েকটি কয়েকটি গণমাধ্যমে বয়স ২৯ এর কথা উঠে আসছে। সেই সূত্র ধরে গত বছরের ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে যাদের বয়স ২৯ সীমারেখার মধ্যে ছিল তারা যোগ্য প্রার্থী হিসাবে বিবেচিত হবে। বয়স ২৭ বা ২৯ যাই হোক না কেন গত বছরের ২৬ জুলাই বয়সের সীমারেখা হিসেব করা ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের বাধ্যবাধকতা।
তবে দলীয় একটি বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে জানা গেছে, সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আগামী নির্বাচন ও ছাত্রলীগের অতীত ঐতিহ্য ও গৌরব ফিরিয়ে আনতে এবং দক্ষ ও উপযুক্ত নেতৃত্ব নির্বাচন করতে বয়সের সীমারেখা ৩০-এ লেভেল করা হতে পারে।
ওবায়দুল কাদেরের ঘোষণার পরে ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এক জরুরি সভা ডেকে ২৯ তম জাতীয় সম্মেলনের তারিখ ৩১ মার্চ ও ১ এপ্রিল ধার্য করা হয়।
বিগত সময়ের মত জামাত-শিবির, ছাত্রদল ঘেঁষা, অপেক্ষাকৃত কম রাজনৈতিক, পারিবারিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ, একেবারে অপরিপক্ব, এমনকি পূর্বেকার মত অপরিচিত- জুনিয়র, সদস্য, সহ সম্পাদক, উপ সম্পাদক অথাবা নামেমাত্র সম্পাদক থেকে সরাসরি কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক করা হবে না বলে প্রত্যাশা করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
এদিকে, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই পদ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদের যে কোনো একটিতে নারী নেতৃত্ব আসছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এমনটা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও চান বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।