বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৭ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ঈশ্বরদী টিভি রিপোর্টার্স ক্লাবের আত্মপ্রকাশ, সভাপতি চ‍্যানেল এস এর বায়েজিদ, সম্পাদক বিজয় টিভির সবুজ কসবায় বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশী আহত কটিয়াদীতে হেলমেট ও লাইসেন্সবিহীন মোটরসাইকেল চালকদের জরিমানা বিয়ের ৪ মাসের মাথায় যৌতুকের দাবিতে নববধূকে পিটিয়ে আহত মুরগির বাচ্চায় দিনে ৯ কোটি টাকা লোপাট নরসিংদীতে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উঠান বৈঠক কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হরিপুরে গ্রামবাংলার ঝোপঝাড় হতে বিলুপ্তির পথে কুচফল ওয়াজের মাঠ কাপানো আর নারীদের খাট কাপানো হুজুর মুফতি মুহাম্মদ শফিকুজ্জামান দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় ৮০০ নেতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে: রিজভী নির্বাচন কবে, সেই ঘোষণা হবে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকেই : প্রেস উইং
বিক্রয়কর্মী থেকে যেভাবে হাজার কোটির মালিক ‘গোল্ডেন মনির’

বিক্রয়কর্মী থেকে যেভাবে হাজার কোটির মালিক ‘গোল্ডেন মনির’

রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় গাড়ি ও স্বর্ণের ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম ওরফে ‘গোল্ডেন মনিরের’ বাসা থেকে এক কোটি ৯ লাখ টাকা ও ৬০০ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব)। একইসঙ্গে র‌্যাব বলছে, গোল্ডেন মনির দেড় হাজার কোটি টাকার মালিক। বাড্ডায় রাতভর অভিযান শেষে শনিবার (২১ নভেম্বর) সকালে সেখানে থেকে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান র‌্যাব সদর দপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ।

তিনি বলেন, ‘অবৈধভাবে বিদেশি মুদ্রা, অস্ত্র ও মাদক রাখার দায়ে বাড্ডা থানায় গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করা হবে। তিনি ২০০টি প্লটের মালিক। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ৩০টি প্লটের কথা স্বীকার করেছেন। তার বাসা থেকে ৬০০ ভরি স্বর্ণ জব্দ করা হয়েছে। দুটি বিলাসবহুল অনুমোদনবিহীন গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। প্রতিটির মূল‌্য ৩ কোটি টাকা। আরো তিনটি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।’ একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ‌্যের ভিত্তিতে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে গোল্ডেন মনিরের বাসায় এই অভিযান শুরু করে র‌্যাব। একইসঙ্গে তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসহ বেশ কয়েকটি জায়গাতেও হানা দেয় র‌্যাব সদস্যরা। রাতভর অভিযান চালানোর পর অবৈধ অস্ত্র, মাদক, স্বর্ণ ও বিপুল পরিমাণ টাকাসহ ‘গোল্ডেন মনিরকে’ গ্রেপ্তার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। অভিযানে মনিরের বেশ কয়েকটি বিলাস বহুল গাড়িও জব্দ করেছে র‌্যাব। র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসুর নেতৃত্বে এই অভিযান চালানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের মুখপাত্র লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, ৯০ দশকের দিকে রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেটে একটি কাপড়ের দোকানের কর্মচারী হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেছিল মনিরুল ইসলাম ওরফে মনির। পরে নিজেই ক্রোকারিজ পণ্যের দোকান দিয়ে বসেন। ওই ব্যবসায় খুব বেশি লাভ করতে না পেরে স্বর্ণের দোকান দেন তিনি। লোভ-লালসায় মগ্ন হয়ে পাশাপাশি যুক্ত হন লাগেজ ব্যবসায় (চোরাচালানী)। বিভিন্ন অবৈধ পণ্যের চোরাচালানীর একপর্যায়ে স্বর্ণ চোরাচালানী কারবারে যুক্ত হন তিনি। রাতারাতি বনে যান কোটিপতি। মানুষ জেনে যায় তার ব্যবসার রহস্য। স্বর্ণ চোরাকারবারী হিসেবেই মানুষ তাকে চিনতে থাকে। মানুষের মুখে মুখেই তার নাম মনির থেকে হয়ে ওঠে ‘গোল্ডেন মনির’। শুধু তাই নয়, চোরাকারবারী বাধামুক্ত করতে তিনি আশ্রয় নেন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায়। বনে যান হাজার কোটি টাকার মালিক। জমি-প্লট দখলে মগ্ন হয়ে অবৈধ অর্থে রাজধানীর মেরুল বাড্ডা, (ডিআইটি প্রজেক্ট) নিকুঞ্জ, পূর্বাচল, কেরানীগঞ্জে দুই শতাধিক প্লট ও বাড়ি নিজের করে নেন। শুধু বাড্ডার ডিআইটি প্রজেক্টে তার ৩০টিরও বেশি প্লট রয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব সূত্র। নিজের বসবাসের জন্য ডিআইটি প্রজেক্টে নির্মাণ করেছেন ৬তলার একটি আলিশান বাড়ি। বাড়ির দ্বিতীয় ও তৃতীয়তলা ডুপ্লেক্স এবং ওপরের বাকি ফ্লোরগুলো তিনি ভাড়া দেন। যদিও করোনাকালে ভাড়াটিয়া সব চলে গেছেন। র‌্যাব সূত্র জানায়, শনিবার (২১ নভেম্বর) ১১টার দুবাই এয়ারলাইনসের (EK-585) ফ্লাইটে মনিরের দুবাই যাওয়ার কথা ছিলো। র‌্যাবের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গোল্ডেন মনির হুন্ডি ব্যবসা, স্বর্ণ চোরাচালানের অবৈধ টাকা ঢাকতে আয়ের উৎস হিসেবে রাজধানীর বারিধারায় ‘অটো কার সিলেকশন’ নামে একটি গাড়ির শোরুম চালু করেন। সেখানেও তিনি অবৈধ পথে বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করতেন। তার নিজের ব্যবহৃত ৫টি বিলসবহুল গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। দুটি তার নিজ বাসা থেকে এবং ৩টি তার গাড়ির শোরুম থেকে। ৫টি গাড়িই অনুমোদন ছাড়া তিনি দেশে এনেছিলেন। র‌্যাব সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দল ও সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজস করে ৯০ দশক থেকে এ পর্যন্ত এক হাজার কোটি টাকার সম্পদ করেছেন। তিনি বিএনপির একজন ডোনার ছিলেন। দলকে আর্থিকভাবে সহায়তা করতেন বলেও তথ্য রয়েছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কার্যালয়ে গোল্ডেন মনিরের ছিলো খুব প্রভাব। সেখানে বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলে রাজধানী ও তার আশাপাশের এলাকার বিভিন্ন জমি দখল করেছেন। রাজউকের একজন সাবেক চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার খুব ঘনিষ্ট সম্পর্ক থাকার তথ্যও রয়েছে। তার সহযোগিতায় মনির রাজউক কার্যালয়ে নিজের অফিস হিসেবে একটি রুম ভাড়া নিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি ওই রুম অফিস হিসেবে ব্যবহারও করেছেন। এছাড়া রাজউকের সিল জালিয়াতি করে একটি জমির দলিল নিজের নামে করে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে রাজউক তার বিরুদ্ধে একটি মামলাও দায়ের করেছিল।

এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। একটি দুদকে এবং অপরটি রাজউকের সিল জালিয়াতি দায়ে। আমরা তার সম্পদের সঠিক তথ্য জানতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও এনবিআরের কাছে তথ্য চেয়ে আবেদন করবো। সেই সঙ্গে অবৈধ গাড়ির বিষয়ে বিআরটিএর তথ্য চেয়ে আবেদন করবো।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com