সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৯ পূর্বাহ্ন
নিজেস্ব প্রতিবেদন: হানসি ফ্লিকের হাত ধরে আমূল বদলে গেছে বার্সেলোনা লা লিগায় দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পাশাপাশি চ্যাম্পিয়নস লিগেও নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে তারা। বিশেষ করে ঘরের মাঠে বায়ার্ন মিউনিখকে উড়িয়ে দিয়ে নিজেদের প্রত্যাবর্তনের ঘোষণাটাও দিয়ে রেখেছে তারা। তবে এল ক্লাসিকো না জিতলে ফেরা কি আর পূর্ণতা পায়!
সেই চ্যালেঞ্জটাও অবশ্য এখন দুয়ারে কড়া নাড়ছে। আজ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ফুটবল–দুনিয়ার অন্যতম বড় দ্বৈরথে রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হবে বার্সেলোনা। পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েই এই লড়াইয়ে নামবে বার্সা। কিন্তু লা লিগায় টানা ৪২ ম্যাচে অপরাজিত থাকা রিয়ালের বিপক্ষে কাজটা মোটেই সহজ হবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, দুর্দান্ত এই রিয়ালকে মোকাবিলায় বার্সেলোনা কতটা প্রস্তুত?
জাভি হার্নান্দেজের বিদায়ের পর ফ্লিকের নিয়োগ নিয়ে অনেক প্রশ্ন ছিল। অনেকেই ধারণা করেছিলেন, বার্সার যে স্বকীয়তা জার্মান ফ্লিক তাঁর সঙ্গে একেবারেই বেমানান। কিন্তু ধারণা বদলাতে খুব বেশি সময় নেননি বার্সার নতুন কোচ। অল্প সময়ের মধ্যে দলের ভেতর সাফল্য ক্ষুধা ও ধারাবাহিকতা নিয়ে এসেছেন তিনি। এমনকি খেলোয়াড়দের সেরাটা বের করে আনার কাজটাও দারুণভাবে করেছেন সাবেক এই বায়ার্ন কোচ। এ মুহূর্তে অনেকের কাছেই লা লিগার সেরা দলও বার্সা।লা লিগার বর্তমান পয়েন্ট তালিকাও অবশ্য একই কথা বলছে। ১০ ম্যাচ শেষে শীর্ষে থাকা বার্সা দুইয়ে থাকা রিয়ালের চেয়ে ৩ পয়েন্টে এগিয়ে আছে। তবে সেরার মুখোমুখি না হলে কি আর সত্যিকারের শক্তি পরীক্ষা হয়! ফলে এল ক্লাসিকো এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে শক্তি পরীক্ষার মানদণ্ড। নতুন এই বার্সা সত্যিই কি বদলে যাওয়া এক দল নাকি রিয়ালের বিপক্ষে বেরিয়ে পড়বে তাদের সমস্ত দুর্বলতা, সেটাই দেখার অপেক্ষা। তবে শেষ পর্যন্ত সেদিন প্রমাণ যা–ই হোক, এখন পর্যন্ত বার্সার যাত্রাটুকু বিবেচনা করলে প্রস্তুতিটা বেশ ভালোভাবেই নিয়ে রেখেছে তারা।
সাম্প্রতিক সময়ে বার্সা সবচেয়ে বেশি চমক দেখিয়েছে আক্রমণভাগে। অথচ গত কয়েক মৌসুমে আক্রমণভাগে বেশ ভুগতে দেখা গিয়েছিল দলটিকে। বিশেষ করে লিওনেল মেসি ক্লাব ছাড়ার পর বার্সা রীতিমতো নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ে। এরপর আক্রমণভাগে নানা ধরনের সমন্বয় দেখা গেলেও কোনোটিই সেভাবে কার্যকারিতা দেখাতে পারেনি।
তবে ফ্লিক দলকে সে অচলাবস্থা থেকে বের করে এনেছেন। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত বার্সার আক্রমণভাগের পারফরম্যান্স দুর্দান্ত। লিগে প্রথম ১০ ম্যাচে বার্সা গোল করেছে ৩৩টি। এর আগে লা লিগায় ১০ ম্যাচ শেষে সর্বশেষ কোনো দল এত গোল করেছিল ২০১৪-১৫ মৌসুমে।
সেবার ১০ ম্যাচে ৩৬ গোল করার কীর্তি দেখিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। আর বার্সেলোনা প্রথম ১০ ম্যাচ শেষ ৩৩ বা তার বেশি গোল করেছিল ২০০৮-০৯ মৌসুমে। ফলে এবার বার্সার আক্রমণভাগ কতটা পরিণত ও ক্ষুরধার, তা এই পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। মূলত আক্রমণভাগে লামিনে ইয়ামাল, রাফিনিয়া এবং রবার্ট লেভানডফস্কির মধ্যে দারুণ বোঝাপড়া গড়ে উঠেছে। যা সব মিলিয়ে বার্সাকে বাকিদের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে রেখেছে। এ ছাড়া আক্রমণভাগের সঙ্গে মিডফিল্ড এবং রক্ষণভাগের সমন্বয়টুকুও বেশ চোখে পড়ার মতো।
এর মধ্যে বার্সাকে স্বস্তি দিচ্ছে পেদ্রি এবং গাভির চোট থেকে ফিরে আসাও। সব মিলিয়ে আক্রমণভাগের এই নতুন রূপ রিয়াল ম্যাচের আগে বার্সাকে নিশ্চিতভাবেই বাড়তি আত্মবিশ্বাস দেবে। বার্সার এই বদলে যাওয়ার জন্য অবশ্য ফ্লিকের কৌশলকেও বিশেষ কৃতিত্ব দিতে হয়। পেদ্রিকে মিডফিল্ডের যেকোনো জায়গায় খেলার স্বাধীনতা দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি রাফিনিয়াকে ফলস নাইন হিসেবে খেলানো এবং জুলেস কুন্দের পজিশন পরিবর্তন করে খেলাও বার্সাকে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে।