মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:২৯ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা আজ আর কেবল শহরের সীমিত গন্ডিতে আটকে নেই। রাজশাহীর পবা উপজেলায় এবার ইউনিয়ন পর্যায়ে ছয়টি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালুর মধ্য দিয়ে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন ঘটেছে। নিজ এলাকায় এ ধরনের সুযোগ পেয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে দেখা গেছে ব্যাপক উৎসাহ ও প্রত্যাশা। আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নতুন সংযোজন হরিয়ান ইউনিয়ন, যেখানে সোমবার (৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় এক অনাড়ম্বর আয়োজনে কেন্দ্রটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরাফাত আমান আজিজ। তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ তরুণদের আত্মনির্ভর করে গড়ে তুলতে তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। কম্পিউটার প্রশিক্ষণ শুধু একটি দক্ষতা নয়, এটি বর্তমান সময়ের মৌলিক চাহিদার মতো। এই দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে শুধু চাকরি নয়, তরুণরা উদ্যোক্তা হিসেবেও নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, অনলাইন মার্কেটিংয়ের মতো খাতে দক্ষ হয়ে অনেকেই ঘরে বসেই আয় করতে পারে। এই প্রকল্প সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পবা উপজেলার হরিপুর, পারিলা, হড়গ্রাম, দর্শনপাড়া, দামকুড়া ও হরিয়ান- এই ছয়টি ইউনিয়নে চালু হয়েছে ইউনিয়ন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ভবিষ্যতে বাকি দুটি ইউনিয়নেও স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এটি শুধু একটি প্রকল্প নয়, বরং গ্রামের তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন মানবসম্পদ তৈরির একটি মডেল। আমরা চাই, প্রযুক্তির সুযোগ যাতে কারও জন্য সীমাবদ্ধ না থাকে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী আবু বাশির। তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্প শুধু অবকাঠামো নির্মাণ নয়, এটি একটি সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প। আমরা মনে করি, প্রযুক্তিগত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলা সম্ভব। ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থাপিত এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তেমনই এক বাস্তব রূপরেখা।’
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির অর্থায়নে এই কেন্দ্রগুলো প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে একসঙ্গে ১১ জন শিক্ষার্থীর জন্য আধুনিক কম্পিউটার, দ্রুতগতির ইন্টারনেট এবং মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কেন্দ্রগুলোতে প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে দক্ষ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের, যারা শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেবেন। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে শুরু করে স্নাতকোত্তর পড়ুয়া যেকোনো শিক্ষার্থী এই কেন্দ্রে ভর্তি হতে পারবেন। প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তুর মধ্যে কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন (এমএস ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট), ইন্টারনেট, ই-মেইল, ডিজিটাল নিরাপত্তা, বর্তমান সময়ের চাহিদাসম্পন্ন গ্রাফিক্স ডিজাইন এবং ফ্রিল্যান্সিং এর মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এবিষয়ে হরিয়ান ইউনিয়ন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষক সাদ্দাম হোসেন জানান, ‘আগের কেন্দ্রগুলোতে শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া ছিল খুবই ইতিবাচক। আমরা কোর্স চালানোর সময় শুধু বইনির্ভর শিক্ষা দিই না, হাতে-কলমে কাজ শেখানোর দিকেও গুরুত্ব দিই। শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস ও আগ্রহ দেখে আমরা উৎসাহ পাচ্ছি।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, হরিয়ান ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছাবের আলী, পবা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলী হোসেন, আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম, জামায়াত ইসলামী হরিয়ান ইউনিয়ন আমির করিম-উজ-জামান সহ প্রশিক্ষণার্থী, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষকবৃন্দ, ইউপি সচিব, সদস্যবৃন্দ, উদ্যোক্তা, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।