সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১১ পূর্বাহ্ন
ভিশন বাংলা ডেস্ক: বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ে গেছে ইতালি। সেই ইতালিতেই বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মুকুট ধরে রাখার প্রস্তুতি শুরু করল জার্মানি! বুধবার থেকে ইতালির দক্ষিণাঞ্চলের ছোট্ট পার্বত্য শহর ইপ্পানে শুরু হয়েছে ‘ডাই ম্যানশ্যাফট’দের বিশ্বকাপ শিরোপা ধরে রাখার মিশনের প্রস্তুতি।
২৭ জনের প্রাথমিক দল ঘোষণা করে প্রত্যেককে ক্যাম্পে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন জার্মান দলের কোচ ইওয়াখিম ল্যোভ। বুধবার ক্যাম্পে যোগ দিয়েছেন ১৯ জন। টোনি ক্রোস কিয়েভে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল খেলার পর যোগ দেবেন ক্যাম্পে। জার্মান কাপের ফাইনালে খেলা বায়ার্ন মিউনিখের ম্যাটস হুমেলস, ইয়োশুয়া কিমিচ, টমাস ম্যুলার, নিকলাস সুলে; বার্সেলোনার গোলরক্ষক মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেন ও চেলসির রক্ষণভাগের ফুটবলার আন্তনিও রুডিগার এসে যোগ দেবেন শুক্রবার। বুধবার স্থানীয় পাঁচতারকা রিসোর্ট উইনিগেগে জার্মান দলের ফুটবলারদের স্বাগত জানান দলের ম্যানেজার ও সাবেক ফুটবলার অলিভিয়ের বিয়েরহফ। ক্যাম্পে যোগ দিয়েছেন মেসুত ওয়েজিল, স্যামি খেদিরা, লেরয় সানেসহ বাকি সবাই; সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ম্যানুয়েল নয়্যারের ক্যাম্পে যোগ দেওয়াটা। বিশ্বের সেরা গোলরক্ষক মনে করা হয়ে জার্মান নাম্বার ওয়ানকে, ‘সুইপার কিপার’ ধারণাটাকে তিনি পোক্ত করেছেন, সেই নয়্যার সেপ্টেম্বরের পর থেকে কোনো ম্যাচ খেলেননি চোটের কারণে। বিয়েরহফ জানিয়েছেন, নিজেকে প্রমাণ করেই গোলবারে জায়গাটা ফিরে পেতে হবে নয়্যারকে, ‘ইয়োগি (ল্যোভ) এরই মধ্যে বলে দিয়েছে, সে কেবল শতভাগ ফিট নয়্যারকেই রাশিয়া নিয়ে যাবে। আমি জানি সে (নয়্যার) প্রচণ্ড পরিশ্রম করছে এবং আমিও আশাবাদী তার ব্যাপারে। আমি তো মনে করি সে নিজের জায়গাটা ফিরে পেতে পারবে।’
দক্ষিণ তিরোলের রিসোর্টটিতে জুনের ৭ তারিখ পর্যন্ত বুকিং দেওয়া আছে জার্মান দলের। ৪ জুনের ভেতর বিশ্বকাপের জন্য চূড়ান্ত ২৩ জনের দল দিয়ে দিতে হবে ল্যোভকে। অর্থাৎ এখান থেকে চারজন, একজন গোলরক্ষক ও তিনজন মাঠের খেলোয়াড়কে ধরতে হবে বাড়ির পথ। বাকিদের গন্তব্য রাশিয়া। ১৭ জুন মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মুকুট ধরে রাখার মিশন শুরু করবে জার্মানি, ‘এফ’ গ্রুপের বাকি দুই দল সুইডেন ও দক্ষিণ কোরিয়া।
বিশ্বকাপ প্রস্তুতির ক্যাম্পটা যে শুরু করা গেল, তাতেই হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন বিয়েরহফ, ‘অবশেষে ক্যাম্পটা শুরু করা গেল। আমরা তো প্রায় মাসদুয়েক লম্বা একটা ক্যাম্প করার কথা ভাবছিলাম।’ এসেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ফুটবলাররা। জিমে ঘাম ঝরাচ্ছেন, নয়্যার গোলবারের নিচে অনেকক্ষণ বল ধরা অনুশীলন করেছেন, স্যামি খেদিরা এনার্জি ড্রিংকের জার তুলে ধরে নিজেকে স্টার ওয়ার্সের জেডাই নাইট মনে করার ছবিও দিয়েছেন টুইটারে। সব মিলিয়ে বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়েই বিশ্বকাপ ক্যাম্প শুরু হয়ে গেছে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। শুক্রবার বাকিরা যোগ দিলে এই ক্যাম্প আরো পূর্ণতা পাবে।
ব্রাজিল বিশ্বকাপেও শহর থেকে দূরে, প্রকৃতির কোলে একটি রিসোর্টে থেকেই অনুশীলন করে দলীয় সমঝোতা বাড়িয়ে নেওয়ার সুফল পেয়েছিল জার্মানি। ইউরোপের প্রথম দল হিসেবে তারা বিশ্বকাপ জিতেছিল লাতিন আমেরিকায় এসে। স্বাগতিক ব্রাজিলকে ডুবিয়েছিল ৭-১ গোলের লজ্জায়, ফাইনালে হারিয়েছিল লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে। এবারও তাই সেই একই পথেই হাঁটছেন ল্যোভ-বিয়েরহফ জুটি। বড় কোনো শহরে, যানজটের বেমক্কা ভিড়ে আটকে থেকে মাঠ-হোটেল আসা-যাওয়া করার চেয়ে বেছে নিয়েছেন ইতালির ছোট্ট পার্বত্য শহরটিকে। যেখানে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে মাত্র শদুয়েক জার্মানভক্ত! রিও ডি জেনেইরোর ৬০০ মাইল দূরে, মাত্র ৯০০ বাসিন্দার জেলেপল্লীতে গড়ে তোলা সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধার ‘কাম্পো বাহিয়া’ যে জার্মান ফুটবলারদের শরীরে ও মনে বাড়তি একটা সতেজতা তৈরি করেছিল; সেটা সাংবাদিক, কর্মকর্তা, খেলোয়াড় সবাই একবাক্যে মেনেছেন। ছোট্ট জায়গায়, নাগরিক কোলাহল থেকে দূরে একাগ্র অনুশীলন আর নিজেদের ভেতর সমঝোতাতেই গড়ে ওঠে দলগত চেতনা। সেই সুফলের কথা মাথায় রেখেই এবারও বিশ্বকাপের আগে জার্মানরা পৌঁছে গেছে ইতালির পার্বত্য শহর দক্ষিণ টিরোলে।
জার্মানির একটি রিয়েল এস্টেট কম্পানি বানিয়েছিল কাম্পো বাহিয়া রিসোর্টটি। জার্মানি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর রিসোর্টের কথাও তো ছড়িয়েছে মুখে মুখে, বেড়েছে পর্যটক আনাগোনাও। উইনিগেগ হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের ভাগ্যটা কেমন, সেটা বোঝা যাবে বিশ্বকাপে! ডিডাব্লিউ, মেইল অনলাইন