সোমবার, ২৫ মার্চ ২০২৪, ০১:১২ পূর্বাহ্ন

পয়সারহাট মৎস্য বন্দর : বছরে ৭২ কোটি টাকার মাছ যাচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়

পয়সারহাট মৎস্য বন্দর : বছরে ৭২ কোটি টাকার মাছ যাচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়

মৃদুল দাস, আগৈলঝাড়া প্রতিনিধিঃ বরিশাল দিন-রাত যে কোন সময়ে খাল-বিলের বিলুপ্ত প্রায় দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ ঘের ও নদীর মাছের পাইকারী ও খুচরা বাজার হিসেবে অল্প দিনেই মৎস্য বন্দর হিসেবে পরিচিত পেয়েছে আগৈলঝাড়ার পয়সারহাট বন্দর। আগে নৌ-বন্দর হিসেবে পরিচিতি পাওয়া পয়সারহাট বন্দরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের সহজলভ্যতার কারণে সৌখিন ক্রেতাদের কাছে বাজারটি দিন দিন আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। বার্ষিক ৭২ কোটি টাকার উপরে মাছ কেনা বেচার সাথে জড়িত এলাকার পাঁচ শতাধিক লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তাদের ভাগ্য বদল করে বয়ে বিপুল পরিমান রাজস্ব।
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত পয়সারহাট-গোপালগঞ্জ-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশে পয়সারহাট এলাকায় এই মৎস্য বন্দরের অবস্থান। ভৌগলিক কারনে খাল বিলে ঘেরা পয়সারহাট বন্দরে উন্নত সড়ক যোগাযোগের ও নৌ পথের কারনে ফজরের আযানের পর থেকে শুরু হয়ে অন্তত রাত ১০টা পর্যন্ত চলে মাছের কেনা বেচা। প্রতিদিনের বাজারে বিভিন্ন প্রজাতির বিভিন্ন সাইজের মাছ কিনতে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে ভ্যান, ট্রলি, নসিমন, পিকআপ নিয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতারা আসেন এই বাজারে। এখান থেকে পাইকারী মাছ কিনে স্থানীয় বাজারগুলোতে খুচরা বিক্রির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছেন অগনিত মৎস্য ব্যবসায়ি। বাজারে সরবরাহকৃত মাছের মধ্যে রয়েছে দেশী পুঠি, সরপুঠি, পাবদা, টেংরা, বাইন, রয়না (মেনি), মলা-ঢেলা, ফলি, খলশে, সিং, কৈ, মাগুর, শোল, গজার, টাকি, ঘের বা পুকুরের মাছের মধ্যে রুই, কাতল, মৃগেল, তেলাপিয়া, পাঙ্গাস, কালিবাউস, কারফু, চায়না সরপুটি, টাটকিনা, কার্প জাতীয় মাছসহ অন্তত ৫০ প্রজাতির মাছ। এই আড়তে ইলিশ মাছ পাওয়া গেলেও এখানে উলে¬খযোগ্য সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়না। বাজারের পাইকারী আড়ত ব্যবসায়ি স্থানীয় রাসেল বক্তিয়ার, ফাইভ ষ্টার মৎস্য আড়তের মালিক মাদারীপুরের ডাসার গ্রামের বাবুল জয়ধর জানান, প্রতিদিন এই বাজারে গড়ে ২০ লাখ টাকার মাছ কেনা বেচা হয়। বাজারে অন্তত ১০টি পাইকারী আড়ৎ রয়েছে। সেই হিসেবে মাসে ৬ কোটি টাকা ও বার্ষিক ৭২ কোটি টাকার উপরে মাছ কেনা বেচা হয়। দিন শেষে আড়তের মাছ ট্রাকে পাঠানো হয় ঢাকাসহ বিভিন্ন পাইকারী বাজারগুলোতে। আড়ৎ ব্যবসায়িরা স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়িদের মাছ চাষের জন্য আর্থিক সাহায্য করে আসছেন বলেও জানান। বিনিময়ে ওই ঘেরের মাছ আড়ৎদারের ঘরে উঠাতে হয় চাষিদের। ব্যাংকিং সুবিধা থাকলেও হরতাল অবরোধের কারণে অনেক সময় ব্যবসায়িরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির সন্মুখিন হন। কাচা পন্যের কারণে বিপর্যস্ত বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, কুয়াশাসহ প্রাকৃতিক দূর্যোগও তাদের জন্য চরম ভোগান্তি বলে উলে¬খ করে তা থেকে মুক্তি পেতে সরকারী উদ্যোগে মৎস্য সংরক্ষনের জন্য হিমাগার নির্মানের দাবি জানান সৎস্য ব্যবসায়ীরা। পয়সা মৎস্য বন্দরের মাছ যায় ঢাকার কাওরান বাজার, আবদুল¬াহপুর, সোয়ারীঘাট, যাত্রাবাড়ী, মধ্যবাড্ডা, কচুক্ষেতসহ বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, রাজবাড়ি, ফরিদপুর, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও স্থানীয় বিভিন্ন হাট বাজারে। ২০১৩ সালের গড়ে ওঠা এই মৎস্য আড়ৎ দেশী প্রজাতির জ্যান্ত মাছের জন্য অল্প দিনেই সর্বত্র পরিচিতি পেয়েছে। খুলনা ও মহিপুরের ব্যবসায়িরা আসেন দেশী প্রজাতির মাছ কিনতে। ভাল বাজার ব্যবস্থার কারণে মাছের চাষ ও উৎপাদ বৃদ্ধিসহ বিক্রির সাথে জড়িত থেকে এলাকার ৫শতাধিক পরিবারে ফিরে এসেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা। বাজারের সভাপতি বাকাল ইউপি চেয়ারম্যান বিপুল দাস জানান, প্রতিদিন পয়সারহাট মৎস্য বন্দরে গড়ে প্রতিদিন ২২ লাখ টাকার মাছ কেনা বেচা হয়। ব্যবসায়িদের মাছ সংরক্ষণের সমস্যার সত্যতা স্বীকার করে তিনি বাজার সম্প্রসারণ ও সুযোগ সুবিধা প্রদানের জন্য স্থানীয় এমপি’র সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান তিনি।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com