শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন
ডেস্ক নিউজঃ ‘উত্তর ফাগুন, সবই যে আগুন, তারপর সবই নীরবতা…’ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গ্লাস টাওয়ারের দিকে নির্নিমেষ চেয়ে থাকতে থাকতে প্রিন্স মাহমুদের গানের এই লাইনগুলো খেলে যায় মাথার ভেতর। সঙ্গে কোথাও থেকে ছুটে আসা হাওয়া জানান দিয়ে যায়, বসন্ত এসে গেছে। এবারের বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশ সুদৃশ্য হয়ে ওঠার পেছনে নিয়ামক গ্লাস টাওয়ার, কৃত্রিম লেক এবং মেলায় স্টলের নতুন বিন্যাস। মেলার যেকোনো প্রান্ত থেকে চোখে পড়ে খোলা লেক, পাশে সারি সারি সিমেন্টের বেঞ্চ। এসব ছাপিয়ে চোখ আটকে যায় গ্লাস টাওয়ারে। বইপ্রেমীরা মেলায় এসে স্টলে স্টলে ঘুরে বই কিনতে গিয়ে তাদের বেশির ভাগের যে পা ব্যথা হয় তার প্রমাণ মেলে লেকের ধারের বেঞ্চগুলোর দিকে তাকালে।
আমিও বসেছিলাম সেখানকার একটি বেঞ্চে। পরিচিত অনেকের সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা। তাদের অনেকে আসবে সন্ধ্যার পর। মাঝখানের সময়টুকু বেঞ্চে বসে পার করছিলাম। বসার এই ব্যবস্থা আগে ছিল না। প্রতিবছর টিন দিয়ে ঘিরে রাখা হতো লেকটি। এবার প্রথম মেলার অংশ করে উন্মুক্ত রাখা হলো।
সন্ধ্যা নেমে এলে বেঞ্চ থেকে উঠে সামনে এগোলাম। স্টলে স্টলে আলো জ্বলে উঠল। চায়ের তৃষ্ণা মেটাতে পা বাড়ালাম ক্যান্টিনে। সেখানে কথাসাহিত্যিক আনিসুল হককে ঘিরে ধরেছে ভক্তকুল।
ক্যান্টিনে খাবারের দাম চড়া। চাপ ২০০ টাকা। হালিম এক বাটি ৯০ টাকা। সঙ্গে যুক্ত সার্ভিস চার্জ। ক্যান্টিন থেকে বের হলে দেখা পাই সাংবাদিক লিটন এরশাদের। এরই মধ্যে আমার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাই নিলয়। তার অটোগ্রাফ প্রয়োজন। বই কিনে আমাকে খুঁজছে। লিটন এরশাদ কফিতে চুমুক দিয়ে বললেন,
—মাহতাব, এবারের স্টলসজ্জা সুন্দর হয়েছে না? অনেক স্পেস।
এবার মেলাসজ্জার কাজ করেছে নিরাপদ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট। ইলিয়াস কাঞ্চনের নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সঙ্গে লিটন এরশাদ যুক্ত। ইলিয়াস কাঞ্চনের ছেলের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কম্পানির সঙ্গেও যে তিনি যুক্ত, তা জানতাম না।
কফি শেষ হলে কথার ফাঁকে বললাম,
—এবারের মেলাটা সৌন্দর্য বাড়িয়েছে কৃত্রিম লেক…
নিলয়কে নিয়ে ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে এলাম। পা বাড়ালাম দেশ পাবলিকেশনসের স্টলে। ওই প্রকাশনী থেকে এবার আমার উপন্যাস ‘শর্মিলা’ প্রকাশিত হয়েছে। পথে পড়ল অনিন্দ্য প্রকাশ। সেখানে বেশ কয়েকজন তরুণ লেখকের সঙ্গে দেখা। থামতেই জানা গেল সাইফুল ইসলাম জুয়েলের বই এখনো মেলায় আসেনি। সত্যজিৎ বিশ্বাস রানার চারটি বই এসেছে। রকিবুল ইসলাম মুকুল কানে হেডফোন লাগিয়ে এক ভক্তকে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন। দেখা হলো ইশতিয়াক আহমেদের সঙ্গেও।
চোখে পড়ল টাইগার নাজিরকে। ছবি আঁকেন। রেজা ঘটকসহ কয়েকজনের সঙ্গে তুমুল আড্ডায় মশগুল। আড্ডার মূল উপজীব্য—কিভাবে বইমেলায় একটি চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা যায়।
আড্ডা পেরিয়ে পৌঁছে যাই দেশ পাবলিকেশনসে। মেলা ঘুরতে গিয়ে সময় অনেকটা শেষ। বের হতে হবে…। মেলা থেকে বের হওয়ার চিরাচরিত একটি দৃশ্য রয়েছে আমাদের। কয়েকজন লেখক বন্ধু একসঙ্গে জটলা পাকিয়ে মেলা থেকে বের হব। হেঁটে হাকিম চত্বর। স্বাদ-বিস্বাদের এক কাপ চায়ে দম। এরপর যার যার বাসা। পরের দিন ফের গন্তব্য বইমেলা।