শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৯:৩২ অপরাহ্ন

বস্তাভর্তি জালভোট: মৈত্রী হলে ভোট শুরু ৩ ঘণ্টা পর

বস্তাভর্তি জালভোট: মৈত্রী হলে ভোট শুরু ৩ ঘণ্টা পর

ঢাবি প্রতিনিধি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে কুয়েত মৈত্রী হলে বস্তাভর্তি ভোট দেয়া ব্যালট উদ্ধারের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে স্থগিত করা ভোটগ্রহণ ফের শুরু হয়েছে।নির্ধারিত তিন ঘন্টারও পর বেলা ১১ টা ১০ মিনিটে শুরু হয় ভোটগ্রহণ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন, বেলা ১১টা ১০ মিনিটে কুয়েত মৈত্রী হলে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।যেটুকুর সময় দেরি করা হয়েছে পরে সেটি পুষিয়ে দেয়া হবে। অর্থ্যাৎ বিকাল পাঁচটা ১০ মিনিট পর্যন্ত ভোট চলবে।
এদিকে রাতেই সিল মারা ব্যালট উদ্ধারের ঘটনায় হলের ভারপ্রাপ্ত প্রভোষ্ট ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শবনম জাহানকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার‌্য আবদুস সামাদকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি ‘তথ্যানুসন্ধান কমিটি’ গঠন করা হয়েছে।
সোমবার সকাল ৮টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলে একসঙ্গে ভোট শুরু হওয়ার কথা থাকলেও কুয়েত মৈত্রী হলে ভোটে অনিয়মের অভিযোগ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সিল মারা ব্যালট দেখিয়ে সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রের বাইরে বিক্ষোভ করতে থাকেন ভোটার ও প্রার্থীরা।
কুয়েত মৈত্রী হলের ছাত্রীরা অভিযোগ করেন, ব্যালটবাক্স আগে থেকেই জালভোট দিয়ে ভরা হয়েছিল। পরে ব্যালটবাক্স দেখতে চাইলে সেই জালভোট দেয়া ব্যালট পেপার বস্তায় ভরে অন্যত্র সরানোর অভিযোগ করেন প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্রীরা।
মৈত্রী হলের ছাত্রীরা ভোটকেন্দ্রের সামনে জালভোট দেয়া ব্যালট পেপার নিয়ে দাঁড়িয়ে অভিযোগ করেন, বর্তমান প্রশাসনের অধীনে কখনই সুষ্ঠু ভোট হওয়া সম্ভব নয়।
এক প্রার্থী বলেন, ব্যালটবাক্স স্টিলের তৈরি হওয়ার কারণে আমরা সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে সেটি চেক করে দেখতে চাই। কিন্তু হলের প্রভোস্ট শবনম জাহান আমাদের সেটি দেখতে দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এ রকম কোনো নিয়ম নেই। পরে অন্যান্য হলে দেখানো হচ্ছে জানালে তিনি বলেন, প্রক্টর এলে সেটি দেখানো হবে।
পরে প্রক্টরিয়াল বডি এসে ভোটকেন্দ্রের দরজা বন্ধ করে দেয়।
তিনি বলেন, এভাবে সকাল ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে আমরা কয়েকজন অনেকটা জোর করেই ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করি। ভোটকেন্দ্রে একটি প্রধান দরজা আর পেছন দিকে আরেকটি দরজা ছিল। যার মাধ্যমে বাইরের দিক থেকে আসা-যাওয়া করা যেত।গতকাল আমরা ওই দরজা বন্ধ করার আবেদন জানালে প্রভোস্ট শবনম জাহান আমাদের নিজেদেরই সেটি বন্ধ করে দিতে বলেন। পরে আমরা একটি বড় তালা এনে সেটি বন্ধ করে দিই এবং চাবি আমাদের কাছে রাখি।কিন্তু আজ আমরা যখন ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করি, তখন দেখি ওই তালাবদ্ধ দরজাটি খোলা। কিন্তু চাবি আমাদের কাছেই আছে।ওই দরজা দিয়ে দেখি জালভোট ভর্তি একটি বস্তা। আরও সামনে এগিয়ে বাথরুমে গিয়ে দেখি আরও কয়েকটি জালভোট ভর্তি বস্তা।
পরে ছাত্রীরা হলগেটে দাঁড়িয়ে জাল ব্যালট মাটিতে বিছিয়ে প্রতিবাদ জানান।
শিক্ষার্থীদের এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উপস্থিত হন প্রক্টর, সহকারী প্রক্টর ও চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা। তাঁদের বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে। একপর্যায়ে উপ-উপাচার‌্য মুহাম্মদ সামাদ সেখানে যান। শিক্ষার্থীরা তখন তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখেন।তারা ভোট স্থগিতের দাবি জানান।
সকাল ১০টার দিকে কুয়েত মৈত্রী হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ব্যালটে ভোট দেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই এই হলের প্রভোস্ট ড. শবনম জাহানকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। নতুন প্রভোস্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ড. মাহবুবা নাসরিনকে।’
এরপর সবার সহযোগিতায় ফের ভোট শুরু করার আশ্বাস দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর। এরপরই প্রোভিসি মোহাম্মদ সামাদ জানান, যে ঘটনা ঘটেছে, যে অনিয়ম হয়েছে, তা তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি জানান, বেলা ১১টা ১০ মিনিটে ভোট শুরু হবে।চলবে বিকাল ৫ টা ১০ মিনিট পর্যন্ত।
প্রসঙ্গত ২৮ বছর পর অনুষ্ঠেয় ডাকসু নির্বাচন শুরু হয়েছে সকাল ৮টায়। বেলা ২টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। এতে ৪৩ হাজার ২৫৬ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। মোট ভোটারের মধ্যে ছাত্র ২৬ হাজার ৯৪৪ এবং ছাত্রী ১৬ হাজার ৩১২ জন।
ডাকসুতে ২৫ পদে নির্বাচন হচ্ছে। বিভিন্ন পদের মধ্যে আছে ভিপি, জিএস, এজিএস একটি করে ৩টি। আরও আছে- সম্পাদকীয় ৯টি এবং ১৩টি সদস্যপদ। এসব পদের জন্য বিভিন্ন প্যানেল ও স্বতন্ত্রসহ প্রার্থী ২২৯ জন। তাদের মধ্যে স্বতন্ত্রসহ ভিপি ২১, জিএস ১৪ জন।
ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ১৩টি প্যানেল। অন্যদিকে প্রত্যেক হল সংসদে ১৩টি পদে নির্বাচন হচ্ছে। এর মধ্যে ভিপি, জিএস, এজিএস একটি করে তিনটি। আরও আছে সম্পাদকীয় ৬, সদস্য ৪টি। হল সংসদ (১৮টি হল, ২৩৪ পদে) প্রার্থী ৫০৯ জন। হল সংসদ ও ডাকসু মিলিয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে গড়ে ৩৮টি করে ভোট দিতে হবে। সুষ্ঠুভাবে ভোটের কাজ শেষ করতে রিটার্নিং অফিসারসহ (আরও) ৪২ জন কাজ করছেন।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com