সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২২ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: পাঁচ দফা দাবি পূরণ না হওয়ায় আবার রাজপথে নেমেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্ত সাত কলেজের শিক্ষাথীরা।
শনিবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে তারা এসব দাবি পূরণ ও অনিশ্চিত ক্যারিয়ার থেকে উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ও কামনা করেন। পাঁচ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আবু বকর বলেন, ঢাবি প্রশাসন আমাদের সাথে প্রহসন করছে। দাবি আদায়ের আশ্বাস দিয়েও তারা আমাদের কোন দাবিই পূরণ করেনি। আবু বকর বলেন, আমাদের দাবি আদায় না হওয়ায় এবং অনিশ্চিত ক্যারিয়ার থেকে উদ্ধারে আমরা আবার রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছি।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী শাকিল বলেন, কোন ধরনের পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সরকারি বাংলা কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। তিনি জানান, অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকেই সাত কলেজে নেমে আসে কালো অধ্যায়। দীর্ঘ ৯ মাস ৭ কলেজের কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর মানববন্ধন কর্মসূচি, অবরোধ কর্মসূচির পর কার্যক্রম শুরু করে। কিছুদিন চলার পরে পুনরায় পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায় সাত কলেজ। তার পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ ও ২৪ এপ্রিল ৫ দফা দাবিতে আন্দোলনের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দাবি গুলো দ্রুত বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলে আমরা আন্দোলন স্থগিত করে ক্লাসে ফিরে যাই। কিন্তু প্রকাশিত একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী কলেজের কাজ বাস্তবায়ন না হওয়ায় আমরা আমাদের সংকটাপন্ন জীবন নিয়ে হতাশ জীবন কাটাচ্ছি।
অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ধারাবাহিক পরীক্ষা আর আমাদের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন আমাদের আবার রাজপথে নামতে বাধ্য করেছে। এমতাবস্থায় আমাদের অধিভুক্ত কলেজের বিষয়ে কোন আশ্বাস নয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সমস্যার সমাধান চাই। আমরা হতাশ তবে প্রধানমন্ত্রী প্রতি আস্থা রাখতে চাই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের আর কোন মিথ্যা আশ্বাস আমরা শুনতে চাই না।
আন্দোলনরতদের দাবি করা পাঁচ দফা হচ্ছে, ১) ফলাফল প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে সকল বিভাগের ত্রুটিমুক্ত ফল প্রকাশ করা।
২) অনার্স, মাস্টার্স, ডিগ্রীর সকল বর্ষে ফলাফল অকৃতকার্য হওয়ার কারণ প্রকাশসহ খাতার পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।
৩) ৭ কলেজ পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ।
৪) সিলেবাস অনুযায়ী মানসম্মত প্রশ্নপত্র প্রণয়ন সহ উত্তরপত্র মূল্যায়ন সম্পূর্ণরূপে সাত কলেজের শিক্ষক দ্বারা করতে হবে।
৫) সেশনজট নিরসনে একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশসহ ক্রাশ প্রোগ্রাম চালু করতে হবে।
৫ দফা দাবি পূরণের আশ্বাস এর পরের ৭০ দিন পরের অবস্থা
৯০ দিনে ফল প্রকাশের দাবি করা হলে অনার্স ২০১৪-১৫ ডিগ্রী ২০১৪-১৫ এর পরীক্ষার ৮ মাস পর আংশিক ফল প্রকাশ এবং অনার্স ২০১৭-১৮ ও ডিগ্রী ২০১৩-১৪ এর পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়নি। গণহারে অকৃতকার্যদের খাতা পুনঃমূল্যায়ন হয়নি। স্বতন্ত্র প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের লক্ষে ও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। চলমান পরীক্ষাগুলোতে পূর্ব ঘোষণা ব্যতীত নতুন প্যাটার্নে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে এবং ৪ ক্রেডিটের পরীক্ষার সময় ৪ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৩ ঘন্টা ৩০ মিনিট করা হয়েছে।
প্রতিটি সেশন এ সকল বর্ষের প্রথম বর্ষ থেকে শেষ বর্ষ পর্যন্ত পরিপূর্ণ একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশের দাবি করা হলেও শুধুমাত্র চলতি বর্ষের অসম্পূর্ণ একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা হয়। কিন্তু সেখানে উল্লেখিত সময়ে পরীক্ষায় অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে না এবং এখন পর্যন্ত ক্রাশ প্রোগ্রাম চালু করা হয়নি। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেটে পরিবর্তন আনা না হলেও ৭ কলেজের সার্টিফিকেটে পরিবর্তন আনা হয়েছে। যা শিক্ষা বৈষম্যের অন্যতম উদাহরণ।
একই সময় অধিভুক্ত সাত কলেজ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বৈষম্যের একটি চিত্র ও তুলে ধরে আন্দোলনরত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সম্মান ২০১৩-১৪ সেশন এ ৭ কলেজে চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা প্রায় পাঁচ মাস আগে শেষ হয়েছে। কিন্তু ফলাফল প্রকাশ হয়নি এখনো। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মাস্টার্সের ফর্ম পূরণ সামনে। বিসিএস, এস এস আই, শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার সুযোগ পেয়েছে তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স শেষ হয়েছে আরো ৪ মাস আগে। বিসিএস, শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পেয়েছে তারা। সম্মান ২০১৪-১৫ সেশন সাত কলেজে তৃতীয় বর্ষের সকল বিভাগের সম্পূর্ণ ফলাফল প্রকাশ হয়নি এখনো। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা চলমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সেশনে মাস্টার্সের ক্লাস শুরু করেছে। বিসিএস, শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার সুযোগ পেয়েছে তারা।
সম্মান ২০১৫-১৬ সেশন ৭ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ক্লাস চলমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ক্লাস চলছে।
একইভাবে ২০১৬-১৭ সেশনের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষে সাত কলেজের পরীক্ষা চলছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় বর্ষের ক্লাস শেষের দিকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষের ক্লাস চলমান। ২০১৭-১৮ সেশনের প্রথম বর্ষের পরীক্ষা সাত কলেজে শেষ হয়েছে ৭ মাস আগে। কিন্তু ফলাফল প্রকাশ হয়নি এখনো। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয় বর্ষের ফরম পূরণ চলতি মাসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস চলমান।
২০১৮-১৯ সেশন ৭ কলেজের প্রথম বর্ষের ক্লাস চলছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ফরম পূরণ শেষ এবং রুটিন প্রকাশ করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ক্লাস চলমান। মাস্টার্স ২০১৫-১৬ সেশন ৭ কলেজে মাস্টার্স পরীক্ষা চলমান। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দু বছর আগে পরীক্ষা শেষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দু বছর আগে পরীক্ষা শেষ। ২০১৬_১৭ সেশনে ৭ কলেজে মাস্টার্স ক্লাস চলমান। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছর আগে পরীক্ষা শেষ। ডিগ্রী ২০১৩-১৪ সেশন ৭ কলেজে তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষ সাত মাস ধরে ফল পাচ্ছে না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মাস্টার্স প্রথম পর্বের পরীক্ষার চলমান। ডিগ্রী ২০১৪-১৫ সেশন ৭ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষে ৮ মাস পর মাত্র একটি বিভাগের ফল প্রকাশ।
অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় বর্ষের ফলাফল প্রকাশ করেছে। ডিগ্রী ২০১৫-১৬ সেশন ৭ কলেজের প্রথম বর্ষের ফলাফল প্রকাশ করেছে মাত্র। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা অক্টোবর মাসে ঘোষণা করেছে। ডিগ্রী ২০১৬-১৭ সেশনের প্রথম বর্ষের পরীক্ষা চলছে সাত কলেজে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা আগস্টে হবে বলে জানিয়েছে। এসব তুলনামূলক বৈষম্য শুধুমাত্র ঢাবি অধিভুক্ত হওয়ার পর যারা ভর্তি হয়েছে তাদের চিত্র।
মানববন্ধনে বক্তরা তাদের দাবিকৃত পাঁচ দফা পূরণ করা না হলে আরো কঠোর কর্মসূচীর হুশিয়ারি দেন।