শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৮ অপরাহ্ন
শেষ সময়ে এসে কী হচ্ছে! জবাব খুঁজতে বসুন্ধরা কিংস সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম আকাশের দিকে তাকান। সেখানে বৃষ্টির পসরা বসিয়েছে ধূসর মেঘমালা। নিচের মাঠ ভেসে গেছে তাতে। মোহামেডানকে হারিয়ে বসুন্ধরা কিংসের শিরোপা উৎসবের প্রস্তুতিও ভেসেছে তাতে। একেবারে অবশ্য নয়, আজ আবার সেই ম্যাচ মাঠে গড়াবে।
কাল ঝুম বৃষ্টির মধ্যেই খেলা শুরু হয়েছিল। কিন্তু মিনিট তিনেক না যেতেই হাল ছাড়তে বাধ্য হন রেফারি। বল তখন পানিতে ভাসছে। খেলোয়াড়দের তুলে নেওয়া ছাড়া তাঁর আর বিকল্প ছিল না। সিলেটে আগের ম্যাচেই অপেক্ষা ফুরানোর কথা ছিল কিংসের। পুরো আসরে যারা কোনো ম্যাচ হারেনি তারা কিনা শেখ রাসেলের বিপক্ষে সেই শিরোপা নিশ্চিত করার ম্যাচটিতেই হেরে গেল! এরপর ঘরের মাঠ নীলফামারীতে মোহামেডানের বিপক্ষে আবার সেই উৎসবের প্রস্তুতি। এবার বৃষ্টির বাধা। মিনহাজ যে আকাশের দিকে তাকিয়েছিলেন তা নিশ্চয় শুধু মেঘ দেখতেই নয়, অদৃষ্টে কী লেখা আছে সেটাই হয়তো খুঁজছিলেন তিনি। নইলে পুরো লিগ এমন নির্বিঘ্নে কাটিয়ে আসার পর এই শেষ সময়ে কিংসের ক্ষেত্রে যা হচ্ছে তা ব্যাখ্যার অতীত। পুরো মৌসুমেই এর আগে শেখ রাসেলের সঙ্গে যতবার দেখা হয়েছে কোনোবারই হারেনি কিংস। কিন্তু সিলেটে সেই রাসেলকেই দেখা গেল একেবারে ভিন্ন চেহারায়। অথচ দ্বিতীয় লেগে দলটি ছন্দ হারিয়েছে বলেই মনে হচ্ছিল। আবাহনী, সাইফ স্পোর্টিং এমনকি চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছেও হেরেছে তারা। সেই দলটিই কিনা অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা কিংসকে হারিয়ে দিল, তাও এমন শিরোপার প্রস্তুতি পণ্ড করে।
এতে আবার একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে বলে মনে করছিল কিংস। কারণ তাতে শিরোপা জয়ের উপলক্ষটা নীলফামারীতে এসে পড়ে। এটা তাদের ঘরের মাঠ। এই মাঠে সেই প্রাক-মৌসুম থেকে শতভাগ জয়ের রেকর্ড তাদের। কিংসের খেলা হলে পুরো নীলফামারী উৎসবে ভাসে। এই মাঠের দর্শক উপস্থিতি এবারের লিগে অন্য যেকোনো ভেন্যুকেই হার মানিয়েছে। সেই মাঠে শিরোপার উৎসবটা তো হবে আরো বর্ণিল। কাল সেই প্রস্তুতিই ছিল। যদিও দুপুরেই আকাশ উপুড় করে দেয় তার জলসম্ভার। তাতে দর্শকদের মাঠে আসার পথেও বিঘ্ন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি উপেক্ষা করেই কিংসের লাল পতাকা উড়িয়ে দর্শকরা গ্যালারিতে জায়গা করে নিয়েছিল। কিন্তু কাকভেজাই শুধু হতে হয়েছে তাতে। স্বাগতিকরা সর্বান্তঃকরণে চেষ্টা করেছে ম্যাচটি যেন হতে পারে। তাতে মাঠের পাশে দ্রুত নালা কেটে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টি বাড়তে বাড়তে একসময় এমন অবস্থায় দাঁড়ায় যে স্টেডিয়ামের বাইরের পানি আর মাঠের ভেতরে সমান। অর্থাৎ পানি সরার কোনো অবস্থাই নেই। ম্যাচ কমিশনার আধাঘণ্টার জায়গায় সোয়া এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেন, রেফারিরা বারবার মাঠে ঘুরে খেলার কোনো পরিস্থিতিই দেখতে পাননি। মাঠের দক্ষিণ দিকের পোস্ট, ডি-বক্স পানিতে তলানো। ঘাসের দেখা নেই, বল ভাসছে অনায়াসে। শেষ পর্যন্ত খেলা আর শুরুই করতে পারেননি তাঁরা। আরো বেশি দেরি করবেন তাঁরা সেই পরিস্থিতিও ছিল না। কারণ শেখ কামাল স্টেডিয়ামে ফ্লাড লাইটও নেই।
মাঠ থেকে উঠে আসার পর থেকেই ড্রেসিংরুমে একরকম গুম হয়ে বসে ছিলেন অস্কার ব্রুজোন। খেলা না হওয়ার সিদ্ধান্তের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথাই বলতে চাইলেন না তিনি। এই ম্যাচ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত খেলোয়াড়দের প্রতিও নিষেধাজ্ঞা কথা না বলার। ম্যাচ তো নয়, শিরোপার অপেক্ষা ফুরানোর অপেক্ষাতেই তিনি। কিন্তু শেষ সময়ে যা হচ্ছে তাতে দুর্ভাবনার মেঘ ভিড় করে আসার কথা তাঁর মনেও। কাল আকাশের মেঘ সরানোর পাশাপাশি সেই মেঘও সরিয়ে শিরোপার আলোয় রাঙার অপেক্ষাতেই যে কিংস।