শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০০ পূর্বাহ্ন
মশা হলো পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক প্রাণী। মশাসহ কিছু পোকামাকড় আছে যারা এক অর্থে আমাদের ঘৃণা করে। এই উদ্বেগজনক, রোগ-বহনকারী কীটপতঙ্গগুলি চলাফেরা করতে পারে এমন সব প্রাণী থেকে রক্ত চুষে জীবিকা নির্বাহ করে। তবে মশার পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা করলে মশা আসলে খুব আকর্ষণীয় একটি সৃষ্টি। চলুন জেনে নেওয়া যাক মশা সম্পর্কিত কিছু অবাক করা তথ্য।
মশা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাণনাশক প্রাণী
সাপ, মাকড়শা, হিংস্র বাঘ, সিংহ, নেকড়ে ইত্যাদি মারাত্মক প্রাণীগুলোর থেকেও মশার মতো একটি পোকা হচ্ছে মানুষের জন্য মৃত্যুকূপ। গ্রহের অন্য যে কোনও প্রাণীর চেয়ে মশার সঙ্গে মৃত্যু শব্দটি বেশি জড়িত। মশা ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু জ্বর, হলুদ জ্বর, জিকা এবং এনসেফালাইটিস সহ যেকোনও মারাত্মক রোগ বহন করতে পারে। প্রতি বছর শুধুমাত্র ম্যালেরিয়া মশা দ্বারা পৃথিবীতে ১ মিলিয়নের বেশি মানুষ মারা যায়।
মশা কতদিন বেঁচে থাকে?
একটি প্রাপ্তবয়স্ক মশা সাধারণত ৫ থেকে ৬ মাস বেঁচে থাকে। তবে প্রাপ্ত বয়স্ক স্ত্রী মশা ২ থেকে ৩ মাস বেঁচে থাকে। অবশ্য এদের মধ্যে অনেকেই আমাদের ব্যবহৃত কীটনাশক কিংবা চপেটাঘাতেও মরে যায়। হয়তো এতো সহজে মেরে ফেলতে পারি বলেই মশাকে খুব ফেলনা ভাবে নেওয়া হয়।
মানুষকে কামড়ায় স্ত্রী মশা
স্ত্রী মশাদের ডিমের জন্য প্রোটিনের প্রয়োজন হয় ফলে খাদ্য হিসেবে রক্ত গ্রহণ করা জরুরী হয়ে পড়ে। এতে তাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে। পুরুষ মশা উৎপাদন প্রক্রিয়ার বোঝা বহন করে না, তাই তারা মানুষকে কামড়ায় না বরং ফুল থেকে নেকটার সংগ্রহ করতে ব্যস্ত থাকে। অবশ্য ডিম উৎপাদন বন্ধ থাকলে স্ত্রী মশাও নেকটার সংগ্রহ করে থাকে।
কিছু মশা মানুষকে কামড়ানো থেকে বিরত থাকে
সব প্রজাতির মশা মানুষকে কামড়ায় না। কিছু প্রজাতি মশা মানুষকে কামড়ানো থেকে একদম বিরত থাকে। বিশেষ করে কুলিসেট মেলানুরা প্রজাতির মশা শুধুমাত্র পাখিদের একচেটিয়াভাবে কামড়ায়। এ ছাড়া ইউরোনোটেনিয়া সাফিরিনা প্রজাতির মশা শুধুমাত্র সরীসৃপ এবং উভচর প্রাণীদের কামড়ায়।
মশা খুব ধীরগতিতে উড়ে
মশা সাধারণত ঘণ্টায় ১ থেকে ১.৫ মাইল গতিবেগে উড়ে থাকে। যদি সমস্ত উড়ন্ত পোকামাকড়ের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় তবে প্রায় প্রতিটি প্রতিযোগী মশাকে পেছনে ফেলতে পারবে।
একটি মশা প্রতি সেকেন্ডে ৩০০-৬০০ বার ডানা ঝাপটায়
এতো দ্রুত ডানা ঝাপটানোর কথা শুনে নিশ্চয় অনুমান করা যাচ্ছে কেন মশা উড়ার সময় বিরক্তিকর ভনভন আওয়াজ সহ্য করতে হয়।
সল্ট মার্শ মশা ১০০ মাইল দূরে গিয়েও বসবাস করে
বেশিরভাগ মশা তাদের জলযুক্ত প্রজনন ক্ষেত্র থেকে সৃষ্টি হয় এবং বাড়ির খুব কাছেই থাকে। তবে সল্ট মার্শ মশার প্রজনন ক্ষেত্র হচ্ছে লবণ জলাভূমি। এদের মধ্যে এডিস মশাও রয়েছে। যারা তাদের প্রজনন ক্ষেত্র থেকে ১০০ মাইল দূরে গিয়েও বসবাস করতে পারে। মূলত এই মশা বাস করার উপযুক্ত জায়গা খুঁজতে এতো দীর্ঘ পথ উড়ে যায়।
মশা ৭৫ ফিট দূরে থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শনাক্ত করতে পারে
কার্বন ডাই অক্সাইড, যা মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণী উত্পাদন করে, এটি হলো মশার জন্য একটি মূল সংকেত যা মশাকে বুঝিয়ে দেয় তার খাবার (রক্ত) খুব কাছাকাছিই আছে।
মশা মারার যন্ত্রগুলো মশাকে আকৃষ্ট করে না
অনেকে ঘরে, অফিসে বাগ জ্যাপারস বা ইলেক্ট্রিক মসুকুইটো কিলার ব্যবহার করেন। কিন্তু মশাকে এসব যন্ত্র আকর্ষণ করে না। মশা মূলত আপনার থেকে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড দ্বারা আকৃষ্ট হয়। এসব যন্ত্র মূলত মশার চেয়ে বেশি উপকারী পোকামাকড় মেরে ফেলতে অধিক দক্ষ।
মশার অস্তিত্ব টিকে আছে কেন?
মশা মূলত টিকে আছে কারণ তাদের অস্তিত্ব মুছে ফেলা প্রায় অসম্ভব। প্রজাতি হিসেবে মশা মিলিয়ন বছর থেকেও প্রাচীন। যতক্ষণ পর্যন্ত এরা খাবার খুঁজে পাবে এবং তাদের অস্তিত্বের উপর পরিবেশগত কোনো চাপ সৃষ্টি না হবে ততদিন পর্যন্ত মশা টিকে থাকবে। বাস্তুতন্ত্রে তারা অন্যান্য প্রজাতির (পাখি, ব্যাঙ এবং মাছ) খাবার এবং পরাগবহনকারী হিসাবে কাজ করে। এদের লার্ভা পানিতে ডিট্রিটাস খায়, এটি পানি পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। মশার ৩০০০ এরও বেশি প্রজাতি রয়েছে তবে এর মধ্যে মাত্র ২০০ প্রজাতির মশা মানুষকে কামড়ায়।
আপনি কীভাবে মশা মারবেন?
মশা মূলত ফগার মেশিন দিয়ে মারা হয়। এই মেশিন থেকে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড মশাকে আকৃষ্ট করে। মশা নিধন থেকে সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। সেজন্য আপনার ঘরের আঙিনা পরিস্কার রাখা এবং জলাবদ্ধতা তৈরি যাতে না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরী।
মশা বিজ্ঞানের উপকার করেছে
মশার সূক্ষ্ম হুল ফোটানো বা প্রোবোসিসের নকশা থেকেই বিজ্ঞানীরা অনুপ্রাণিত হয়ে ব্যথাহীন হাইপোডার্মিক সূঁচগুলো ডিজাইন করেছে। এ ছাড়া সূঁচের সন্নিবেশকে আরও সহজ করার কৌশলগুলি পরীক্ষা করতে এবং মস্তিষ্কের মধ্যে ক্ষুদ্রতর ইলেকট্রোড স্থাপনের জন্য বিজ্ঞানীরা এখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে।