সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১১ পূর্বাহ্ন
ল্যাকমে ফ্যাশন উইকের গ্র্যান্ড ফিনালে মানেই কারিনা কাপুরের সদর্প উপস্থিতি। এ বারের ফ্যাশন পার্বণের সামার রিসর্ট এডিশনও তার ব্যতিক্রম ছিল না। রাত দশটায় ফিনালে। সেখানেই অনামিকা খন্নার কালো পোশাকে করিনার ছবি মুহূর্তে ভাইরাল হয়েছে। তার আগে বিকেল পাঁচটা থেকে চলেছে সাক্ষাৎকার পর্ব। মুম্বাইয়ের পাঁচতারা হোটেল তাজ ল্যান্ডস এন্ড-এ। সেখানে সময়মতো পৌঁছে শুনলাম, মিসেস কাপুর খানও নাকি একদম সময়মতো চলে এসেছেন এবং দারুণ মুডে আছেন! ইন্টারভিউয়ের জন্য লম্বা লাইন আপ। সে সব সেরে তিনি যাবেন রিহার্সালে, হোটেলের পাশেই বান্দ্রাফোর্টে। এখানেই হবে গ্র্যান্ড ইভেন্ট। তৈমুরের জন্মের ঠিক চল্লিশ দিনের মাথায় এই দুর্গেই তিনি প্রথম র্যাম্পে হেঁটেছিলেন। তার পর আবার এই ফিনালেতে সেই আলো-আঁধারি মোড়া দুর্গে কারিনা।
যাই হোক, হোটেলের এক এলাহি কনফারেন্স রুমে বসে তিনি তখন একের পর এক সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। সেখানে নায়িকার সঙ্গে রয়েছে তাঁর টিমও। পার্সোনাল হেয়ার স্টাইলিস্ট, ম্যানেজার, পিআর… কাচের দরজার ও পাশ থেকে দেখলাম, কথা বলতে-বলতে আয়না আনতে নির্দেশ দিচ্ছেন। লিপস্টিক ঠিক আছে কি না দেখে নিচ্ছেন। তার মাঝে চলছে ফোটো সেশনও। একটা ইন্টারভিউ শেষ হতেই হেয়ার স্টাইলিস্ট চুল ঠিক করে দিচ্ছেন। আর নিজের টিমের সঙ্গে চলছে গল্প, হাসাহাসি। বুঝলাম, মেজাজি নায়িকা খুশি! তার পর এল আমার পালা। অনামিকা খন্নার এমব্রয়ডারি করা লং স্কার্টের সঙ্গে ভিনটেজ কাঁচুলি, তার উপর লং শ্রাগ। নুড রঙা পোশাক তাঁর দুধে-আলতা গায়ের রঙে যেন মিশে যেতে চাইছে। চোখে মোটা করে কাজল (করিনার সিগনেচার স্টাইল), ঠোঁটে নুড লিপস্টিক। পিঠের উপর ছড়িয়ে থাকা চুল যখন মাঝেমধ্যে সরাচ্ছেন, আঙুলের বহুমূল্য হিরের দিকে চোখ পড়তে বাধ্য। কমপ্লেকশন, অ্যাটিটিউড, পার্সোনা… সব মিলিয়ে আমার সামনে যিনি তখন বসে, তিনি এক ধাঁধা। চেষ্টা করলাম সমাধান করতে…
প্র: আপনি যে পোশাক পরেন, সেটাই হয়ে যায় ট্রেন্ড। পরদা বা পরদার বাইরে সব সময় বাকিদের চেয়ে আলাদা…
উ: ওয়েল (বলেই হেসে ফেলে), আই ডোন্ট থিঙ্ক সো। আসলে আমি এর জন্য আলাদা করে কোনও চেষ্টা করি না বা ট্রেন্ডও ফলো করি না। মনে হয় সেটাই আমাকে আলাদা করে দেয়। আমি সব সময় কমফর্টকে স্টাইলের উপরে জায়গা দিয়েছি। আর আপনি যখন কোনও পোশাকে কমফর্টেবল থাকেন, খুব সহজেই আপনাকে স্টাইলিশ লাগে। আর এখন ফিল্ম হোক বা অভিনেতাদের ব্যক্তিগত জীবন, ফ্যাশন হল টপ প্রায়োরিটি।
প্র: আপনার ত্বকের জন্য বোধহয় কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়…
উ: আসলে, আমার মায়ের স্কিন অসাধারণ এবং আমি মায়ের মতো ত্বক পেয়েছি। সেই সঙ্গে প্রচুর জল খাওয়া আর ময়েশ্চারাইজেশন…
প্র: জীবনে আপনার প্রাপ্তি অনেক। এবং তার পরও আপনি এগিয়ে চলেছেন… উৎসাহ পান কী ভাবে?
উ: সতেরো বছর বয়সে অভিনয় জগতে পা রেখেছি। প্রায় দু’ দশক হয়ে গেল কাজ করছি। আমি সব সময় একজন ওয়র্কিং ওয়াইফ হতে চেয়েছি, যা আমি হয়েছি। এখন আমি ওয়র্কিং মাদারও বটে। আমার জন্য ইট’স আ জব এবং যেটা করতে আমি ভালবাসি। সেই সঙ্গে আমি খুব লাকিও যে, এমন একটা পরিবার পেয়েছি, যারা আমাকে, আমার পেশাকে খুব সাপোর্ট করে। যে দিন আপনি আপনার কাজটাকে আর এনজয় করবেন না, সে দিন থেকে মনে হয় আর সেই কাজটা করা উচিত নয়। বলিউডে কাজ করার সুবিধে হচ্ছে, এখানে অনেক পরিচালক, বহু রকম বিষয় নিয়ে কাজ করার সুযোগ পাওয়া যায়, সেটাই আপনাকে প্রতিনিয়ত এগিয়ে দেয়। কত ধরনের মানুষের সঙ্গে রোজ আমরা মিট করতে পারি, অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক, টেকনিশিয়ান… তাঁদের কাছ থেকে কত নতুন কিছু শিখতে পারি। আর এত বছরের কেরিয়ারে আমি বোধহয় এখানকার সব পরিচালকের সঙ্গেই কাজ করে ফেলেছি। তাই জন্যই বোধ হয় আঠেরো বছর ধরে কাজ করে যেতে পারছি।
প্র: একটা বাক্যে যদি করিনা কপূরকে বর্ণনা করতে বলা হয়, কী বলবেন?
উ: সেটা আমি কী ভাবে বলি বলুন তো! পাশ থেকে তাঁর হেয়ার স্টাইলিস্ট বলে ওঠেন, ফ্যাবুলাস! (শুনে মুক্তো-ঝরানো হাসি করিনার) হ্যাঁ, ইউ ক্যান সে ‘ফ্যাব’!
প্র: কারিনা কাপুরের সব সিক্রেট শেয়ার করার সঙ্গী?
উ: আমরা দুই বোন এবং আমরা পরস্পরের খুব কাছের। আমি সত্যি লাকি যে, লোলোর (কারিশ্মা কাপুর) সঙ্গে আমি সব সিক্রেট শেয়ার করতে পারি।
প্র: ফেব্রুয়ারি মানেই ভালবাসার মাস। ভ্যালেনটাইন্স ডে নিয়ে কোনও প্ল্যান?
উ: আই ডোন্ট নো! (হাসতে হাসতে) আমি যদি আমার হাজব্যান্ডকে বলি, ফেব্রুয়ারি ইজ লাভ মান্থ, হি উইল প্রোব্যাবলি স্ল্যাপ মি। ও বলবে, হোয়াট ডু ইউ মিন! আমার তো মনে হয়, প্রত্যেকটা দিন ভালবাসার। তার জন্য কোনও বিশেষ দিনের দরকার পড়ে না। হোপফুলি আমরা সারা জীবন পরস্পরকে ভালবাসব এবং একসঙ্গে থাকব।
প্র: তৈমুরও কিন্তু এখন খুদে সেলেব! শোনা যাচ্ছে, ও প্লে স্কুলেও যাচ্ছে…
উ: তৈমুরের বয়স মাত্র চোদ্দো মাস এবং ও কোনও প্লে স্কুলে যাচ্ছে না। এই খবরটা সম্পূর্ণ ভুল। আসলে লোকজন নানা রকম ভেবে নেয় এবং সেই মতো রটাতে থাকে। হি ইজ জাস্ট আ টডলার! তৈমুরের খবর এখন আমার চেয়ে মিডিয়াই বেশি রাখে।
প্র: তৈমুরের জিমে যাওয়ার খবরও কিছু দিন আগে সব জায়গায় ছিল…
উ: মাই গড! এটাও একেবারে সত্যি নয়। আই জাস্ট হোপ অ্যান্ড প্রে, ও যেন স্বাভাবিক শৈশব পায়। আমরাও যেন ওকে স্বাভাবিক ভাবে বড় করে তুলতে পারে, যেমন আমি হয়েছি। আনন্দবাজার পত্রিকা