সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:১৩ অপরাহ্ন
এক সময়কের স্রোতস্বিনী তিস্তা ‘নদী’ এখন ধু ধু বালুচর। আন্তর্জাতিক নীতিমালাকে অগ্রাহ্য করে ভারত অভিন্ন নদী তিস্তায় নিজের অংশে বাঁধ দিয়ে অনেকটা মেরে ফেলেছে বাংলাদেশ অংশকে। তিস্তা এখন এক মরা নদীতে পরিণত হয়েছে, ফলে গত চার বছরে তিস্তা প্রকল্পের সেচসুবিধা থেকে বাদ পড়েছে ৫৭ হাজার হেক্টর জমি।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালেও ৬৫ হাজার হেক্টর জমি তিস্তা প্রকল্পে সেচের আওতায় ছিল। এবার পেয়েছে মাত্র ৮ হাজার হেক্টর জমি। রংপুর–দিনাজপুর অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষককে এখন গুনতে হবে বাড়তি টাকা।
এক সপ্তাহ আগে চলতি মৌসুমে বোরো সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম শুরু করে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলা থেকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড ও তিস্তা সেচ প্রকল্প সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে বোরো মৌসুমে রংপুর, নীলফামারী ও দিনাজপুর জেলার ৬৫ হাজার হেক্টরে সেচসুবিধা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু সেচ দেয়া হয় মাত্র ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে। পানির অভাবে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। এবার মাত্র ৮ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সূত্রটি আরও জানায়, দিনাজপুর ও রংপুরের কমান্ড এলাকার ৫৫ হাজার হেক্টর জমি সেচ কার্যক্রম থেকে বাদ দিয়ে শুধু নীলফামারী জেলার ডিমলা, জলঢাকা, নীলফামারী সদর ও কিশোরগঞ্জ উপজেলাকে সেচের আওতায় রাখা হয়েছে। তবে উজানের প্রবাহ পাওয়া গেলে সেচের জমির পরিমাণ রংপুর ও দিনাজপুরে বাড়ানো যেতে পারে বলে দাবি সংশ্লি¬ষ্ট সূত্রের।
তিস্তা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ বলছে, চলতি বোরো মৌসুমে অনেক জমিতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কৃষকদের সেচ দিতে হবে। এতে কৃষকদের হেক্টর প্রতি বাড়তি ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হবে।
পানি উন্নয় বোর্ড সূত্রমতে, বোরো আবাদের জন্য তিস্তা সেচ প্রকল্পে কমপক্ষে ১০ হাজার কিউসেক পানি প্রয়োজন। কিন্তু এর তিন ভাগের এক ভাগও পাওয়া যাচ্ছে না।
তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাফিউল বারী সাংবাদিকদের জানান, উজানের প্রবাহ দিন দিন কমে আসায় তিস্তা নদীর পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে তিস্তা ব্যারাজের কমান্ড এলাকায় স¤পূরক সেচ কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্প সূত্র জানায়, সেচ প্রকল্প এলাকায় সেচ দেয়া এবং নদীর প্রবাহমাত্রা ঠিক রাখতে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানির স্বাভাবিক প্রবাহমাত্রা থাকা প্রয়োজন ২০ হাজার কিউসেক পানি। শুধু সেচ প্রকল্প চালাতেই প্রবাহমাত্রা থাকা প্রয়োজন ১৪ হাজার কিউসেক এবং নদীর অস্তিত্ব রক্ষার জন্য প্রয়োজন চার হাজার কিউসেক পানি। সেখানে শুস্ক মৌসুমে পানি পাওয়া যাচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ কিউসেক।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৯৩–৯৪ শস্যবছর থেকে উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলের ১২টি উপজেলায় ব্যাপকভাবে আউশ ও আমন উৎপাদনের মাধ্যমে আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে তিস্তার পানি দিয়ে সেচ কার্যক্রম শুরু হয়। পরে ২০০৬–২০০৭ শস্যবছর থেকে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বোরো মৌসুমেও সেচ কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হয়। আমন মৌসুমে মোট সেচযোগ্য ৭৯ হাজার ৩৭৯ হেক্টর এলাকার প্রায় পুরোটাই সেচের আওতায় আনা সম্ভব হলেও বোরোর ক্ষেত্রে পানির দুষ্প্রাপ্যতায় সেচ–সাফল্যের চিত্র একেবারেই হতাশাজনক।
শুকনো মৌসুমে ভারতের প্রত্যাহারের পর যে সামান্য পরিমাণ পানি তিস্তা নদীতে পাওয়া যায়, তার সবটুকুই সেচ চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের সেচ খালের মাধ্যমে কৃষিজমিতে সরবরাহ করা হচ্ছে। এ কারণে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা ব্যারাজ থেকে ৯৭ কিলোমিটার বিস্তৃত তিস্তা নদীতে এক কিউসেক পানিও থাকছে না। এ কারণে তিস্তা অববাহিকার বাংলাদেশ অংশের এই বিশাল পরিমাণ নদীগর্ভ পরিণত হচ্ছে বালুচরে। তিস্তা ব্যারাজ এলাকার অপর অংশ নদী শুকনো মৌসুমে এভাবেই মারা যাচ্ছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সার্কেল–১) মো. হারুণ অর রশিদ বলেন, এখন তিস্তায় কোনো ‘প্রবহমান’ পানি নেই। তাই এবার তিস্তার পানি দিয়ে শতভাগ সেচ দেয়া সম্ভব হবে না। তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে এখন যে পানি আছে তা যথেষ্ট নয়।
ডিমলা প্রতিনিধি, নীলফামারী