রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৩ পূর্বাহ্ন
একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : পিআইডি
আজ মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। বাঙালি জাতির ইতিহাসে বেদনা ও গৌরবদীপ্ত অহংকারে মহিমান্বিত মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার ৬৬ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। ১৯৫২ সালের এই দিনে বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশের যে সংগ্রামের সূচনা হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় পথ বেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। মাতৃভাষার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন রফিক, সালাম, বরকত, সফিউর, জব্বাররা। তাঁদের রক্তে শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছিল বাংলার দুঃখিনী বর্ণমালা।
যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে শোকবিহ্বল জাতি তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করছে আজ। একই সঙ্গে সারা বিশ্বে গভীর শ্রদ্ধায় পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণী দিয়েছেন।
গত রাতে একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় বাজছিল অমর সেই গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি…।’ রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রথমে রাষ্ট্রপতি, তার পরই প্রধানমন্ত্রী ভাষাশহীদদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তাঁরা কিছু সময় শহীদ বেদিতে নীরবে দাঁড়িয়ে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান ও তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
ভাষাশহীদদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে ১২টা বাজার কিছু সময় আগে শহীদ মিনারে উপস্থিত হন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। প্রথম প্রহর মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১১টা ৫৩ মিনিটে শহীদ বেদিতে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁকে অভ্যর্থনা জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমাদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ও প্রক্টর এ কে এম গোলাম রাব্বানী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক।
রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে শহীদ বেদিতে আসেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। তাঁকে অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ ও অন্যান্য শিক্ষক। এ সময় মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট, বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও হল প্রাধ্যক্ষরা উপস্থিত ছিলেন।
শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আসার পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী আস্তে আস্তে মূল বেদির দিকে এগিয়ে যান। রাত ১২টা ১ মিনিটে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর পরই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এরপর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলীয় প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা পুনরায় শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এরপর যথাক্রমে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষে আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ঢাকায় বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকগণ, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত মেয়র, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের পক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, র্যাব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বাংলা একাডেমি, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, জাসদ (ইনু), ওয়ার্কার্স পার্টি, বিএনসিসি, সাম্যবাদী দল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, বাসদ (মার্ক্সবাদী), জাসদ (আম্বিয়া), বাসদ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ প্রভৃতি সংগঠন শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।
রাষ্ট্রপতির বাণী : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাঁর বাণীতে বলেছেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় অমর একুশের চেতনা আজ অনুপ্রেরণার অবিরাম উৎস।’
প্রধানমন্ত্রীর বাণী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেছেন, ‘আমরা একটা জাতি, বাঙালি জাতি, আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি—আমাদের গৌরবের অনেক কিছু রয়েছে, সেই সব আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে। আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি—সেগুলো কেউ যেন ভুলে না যায়, সে জন্য এর যথাযথ মর্যাদাও আমাদের দিতে হবে।’ এ ছাড়া বাণী দিয়েছেন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি : একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। সকাল সাড়ে ৬টায় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সারা দেশে সংগঠনের সব শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় কালো ব্যাজ ধারণ, প্রভাতফেরিসহকারে আজিমপুর কবরস্থানে ভাষাশহীদদের কবরে ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন। ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনাসভা। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করবেন। সভায় বুদ্ধিজীবী ও জাতীয় নেতারা বক্তব্য দেবেন।