শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৩৬ অপরাহ্ন

আগৈলঝাড়ায় বর্নাঢ্য আয়োজনে কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের জন্ম শত বার্ষিকী উদযাপন

আগৈলঝাড়ায় বর্নাঢ্য আয়োজনে কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের জন্ম শত বার্ষিকী উদযাপন

মোঃ জহিরুল ইসলাম সবুজ. আগৈলঝাড়া (বরিশাল)প্রতিনিধিঃ

মুজিব শতবর্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভগ্নিপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফা, বাংলাদেশ কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাতা, বরিশাল তথা দক্ষিণবাংলার কৃতী সন্তান, কৃষক কুলের নয়ন মনি, মন্ত্রী আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর পিতা সাবেক মন্ত্রী শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের জন্ম শতবার্ষিকী তাঁর জন্মস্থান বরিশালের আগৈলঝাড়ায় বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে।

আগৈলঝাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের শততম জন্মদিন ২৮মার্চ রবিবার সকাল এগারোটায় দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে পতাকা উত্তোলন, জাতির পিতা ও আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন, সকল শহীদদের স্মরণে নীরবতা পালন শেষে দলীয় নেতা কর্মীদের নিয়ে আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের জন্ম শতবার্ষিকীর আনন্দ শোভাযাত্রা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিন করে। এর আগে সকাল থেকে বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে দলীয় নেতা কর্মীরা বিভিন্ন বাদ্য-বাজনা ও মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জরো হতে থাকে।

পরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সুনীল কুমার বাড়ৈর সভাপতিত্বে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের অম্লান দীর্ঘ কর্মময়জীবন নিয়ে স্মৃতি চারণ করে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ মো. লিটন। এসময় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও আগৈলঝাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত, থানা অফিসার ইন চার্জ মো. গোলাম ছরোয়ারসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষকলীগ, শ্রমিকলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরসহ বিভিন্ন ইউনিয়ননের সভাপতি ও সম্পাদকসহ তৃণমুল পর্যায়ের নেতা কর্মীরা।

পরে জাতির পিতা ও শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতসহ ১৫ আগস্ট নিহত সকল সদস্যদের রুহের মাগফিরাত কামনা ও সকল সদস্যদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে মিলাদ ও দোয়া পরিচারণা করেন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা ফজলুল হক ও নগরবাড়ি জামে মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মো. আল-আমিন হোসাইন।

এদিকে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের জন্ম শতবার্ষিকীতে তাঁর অধ্যয়ন করা স্কুল সরকারী গৈলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে রবিবার সকাল সাড়ে নয়টায় মহান এই নেতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হকসহ অন্যান্য শিক্ষক মন্ডলী ও পরিচালনা কমিটির সদস্যরা। একইভাবে আগৈলঝাড়া ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমীতে আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের জন্ম শতবার্ষিকীতে অনুরুপ অনুষ্ঠান পালন করা হয়েছে।

আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের জন্ম শতবর্ষের অনুষ্ঠানে উপজেলার বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যানগন উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের জন্ম পরিচয়ঃ
আব্দুর রব সেরনিয়াবাত (১৯২১-১৫ আগস্ট ১৯৭৫)। ১৯২১ সালের ২৮মার্চ বাংলা ১৩২৭ সনের ২৭ চৈত্র বরিশাল জেলার তৎকালীন গৌরনদী বর্তমান আগৈলঝাড়া উপজেলার সেরাল গ্রামে পিতা আব্দুল খালেক সেরনিয়াবাত ও মাতা ফকরুননেছা বেগমের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন।
আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ছিলেন বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভগ্নিপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফা। তিনি জাতির পিতার সাথে ১৯৭৫ সালের ১৫আগষ্ট নির্মম হত্যা কান্ডের শিকার হন।

শিক্ষা জীবনঃ
আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বর্তমান সরকারী গৈলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করে ১৯৩৯ সালে ভোলা থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৪১ সালে বরিশাল ব্রজ মোহন কলেজ থেকে ইন্টার মিডিয়েট, ১৯৪৩ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে বি.এ পাশ এবং ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ল’ ডিগ্রি লাভ করেন।

রাজনৈতিক কর্মময় জীবনঃ
আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশালে আইন পেশা শুরু করেন। আইন পেশার পাশাপাশি ১৯৫৮-৬০সাল পর্যন্ত বর্তমান সরকারী গৈলা মঢেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সম্পাদকরে দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিথযশা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত একই সাথে সাংবাদিকতা পেশায় কাজ করেন। সফম্বল সাংবাদিকদের সংগঠন ‘সাংবাদিক সমিতি’র বরিশাল শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

গণতন্ত্রী দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে (১৯৫৬-৫৭) দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়। ১৯৫৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠিত হলে এই দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।

তিনি ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটিরও সদস্য ছিলেন (১৯৬৪)। ১৯৬৯ সালে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং ১৯৭০ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য ছিলেন।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি বরিশাল থেকে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং মুজিবনগরে গঠিত বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার পরিচালনায় অন্যতম ভূমিকা রাখেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে ১৯৭২ সালে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ভূমি প্রশাসন, ভূমি সংস্কার এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি সম্পদ ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।

আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ১৯৭৩ সালে বরিশাল থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগের (বাকশাল) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। দেশের কৃষকদের মুক্তির লক্ষে তিনি কৃষক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।

কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাতাঃ
স্বাধীনতা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির কার্যক্রমে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে কাজ করতে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭২সালের ১৯এপ্রিল আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বাংলাদেশ কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

বর্নাঢ্য শেষ বিদায়ঃ
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আনুমানিক ভোর ৫টায় ২৭ মিন্টো রোডে আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাস ভবনে মেজর শাহরিয়ার রশিদ, মেজর আজিজ পাশা, ক্যাপ্টেন নুরুল হুদা এবং ক্যাপ্টেন মাজেদ এর নেতৃত্বে¡ আক্রমন করা হয়। নরপিশাচেরা হত্যা করে নিস্কলংক, নিরহংকার, অসাম্প্রদায়িক চেতনার মহান নেতা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তাঁর মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু, ভাতিজা সহিদ সেরনিয়াবাতকে। এসময় অন্যান্যদের সাথে রব সেরনিয়াবাতের স্ত্রী আমেনা বেগম, পুত্রবধু সাহান আরা আবদুল্লাহ গুরুতর জখম হন। নির্মম ঘটনার দিন দরজার পিছনে লুকিয়ে ঘাতকের হাত থেকে বেঁচে যান তাঁর পুত্র আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ।

আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের পরিসমাপ্তির পর তাঁর সুযোগ্য পুত্র আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ -এমপি, বাবার মতো আদর্শীক রাজনৈতিক সমৃদ্ধ জীবনে দেশের মানুষের জন্য নিজেকে আত্মনিয়োগ করে কাজ করে যাচ্ছেন। ১৯৭১ সনে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ গ্রহনের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক হিসেবে দক্ষিনাঞ্চলে মুজিব বাহিনীর প্রধান হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ।

আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ -এমপি জাতীয় সংসদের সাবেক চীফ হুইপ এর দ্বায়িত্ব পালন শেষে বর্তমানে মন্ত্রী মর্যাদায় পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন, পরীবিক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সরকার ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনে নিজেকে সক্রিয়ভাবে জড়িত রেখেছেন।

আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের মিন্টো রোডের সেই ঐতিহাসিক বাসভবন বর্তমানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com