বুধবার, ২৭ মার্চ ২০২৪, ০৮:৫৭ পূর্বাহ্ন

আগৈলঝাড়ায় দুই পশুর হাটে নামেই ৪৬ শর্ত, চলছে বিধি ভাঙ্গার খেলা

আগৈলঝাড়ায় দুই পশুর হাটে নামেই ৪৬ শর্ত, চলছে বিধি ভাঙ্গার খেলা

মোঃ জহিরুল ইসলাম. আগৈলঝাড়া:
বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারনে বরিশালের আগৈলঝাড়ায় মাত্র দুটি পশুর হাটের অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। রাজিহার ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ও গৈলা ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স এর সামনের মাঠে রবিবার থেকে পশু কেনা বেচা শুরু হয়েছে। অস্থায়ী পশুরহাট চলবে বুধবার পর্যন্ত। তবে অস্থায়ী দুটি পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। করোনা সংক্রমন ছড়ানোর আশংকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাটে আগত ক্রেতা ও বিক্রেতাদের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে কঠোর অবস্থানে থাকার নির্দেশনা থাকলেও স্বাস্থ্যবিধির কোন তোয়াক্কা না করেই চলছে হাটে লোক সমাগম ও পশু বেচা কেনা। হাটের ক্রেতা-বিক্রেতাদের অধিকাংশ মানুষই মাস্ক ব্যবহার করেন না। পশুর হাট দুটোতে চলছে বিধি ভাঙ্গার খেলা। বিক্রেতা ও ক্রেতাদের জন্য যে ৪৬টি শর্ত দেওয়া হয়েছে নামে মাত্রই। নজরদারিও নেই কর্তৃপরে।

সরেজমিনে উপজেলার অস্থায়ী দুটি পশুর হাটে ঘুরেও দেখাগেছে, সারি সারি বাঁশ বাধা। বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা গরু নিয়ে আসছেন। এ বছর ভারতীয় গরু হাটে না থাকায় পাইকার ও খামারীরা দেশী গরুর দামও হাকছেন একটু বেশী। হাটের প্রথম দিন রবিবার বেচা-কেনা তেমন না হলেও ক্রেতারা হাটে এসে তাদের কোরবানীর পশু পছন্দ করা এবং দাম করে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন।

গত বছরের তুলনায় এবছর হাটে বেশী পশু আমদানী হবে বলে জানিয়েছেন হাটের আয়োজকরা। এবছর হাটে আসা সব পশুই দেশী। অন্যান্য বছরের তুলনায় পশুর দাম একটু বেশী চাইছেন বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। তবে শেষ দুই দিন জমবে পশুর হাট।

গৈলা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে অস্থায়ী পশুর হাটে নগরবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা সিদ্দিক খান এসেছেন গরু কিনতে। তিনি বলেন, হাতে অবসর সময় ছিল তাই হাটে এসেছি। দাম কিছুটা বেশি মনে হচ্ছে। পছন্দের পাশাপাশি দাম ঠিকঠাক মনে হলে কিনব। না হয় পরে কিনব। এখনো সময় আছে।

যে সব ক্রেতা একটা গরু কিনতে আসছে তাদের সাথে দেখা যায় ৭-১০ জন লোক আসছে। এতে করে করোনা সংক্রামনের ঝুঁকি থেকে যায়। পশুর হাটে নেই স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক সংক্রান্ত কোন ব্যাবস্থা।

একই দৃশ্য মিলল রাজিহার ইউনিয়নের বাশাইল বাজারে অস্থায়ী পশুর হাটে ইতোমধ্যেই অনেক পশু এসেছে। হাটে ব্যাপক জনসমাগমও ছিল। তবে বিক্রি কম, অনেকেই এসেছেন দরদাম সম্পর্কে ধারণা পেতে। তাদের মধ্যে অধিকাংশেরই আবার স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে অনীহা দেখা গেছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ এবার কোরবানির পশুরহাটগুলোতে কঠোর নজরদারি করার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হলেও উপজেলা প্রশাসনের নেই কোন নজরদারি।

গরুর হাটে বিক্রেতা ও ক্রেতাদের জন্য যে ৪৬টি শর্ত দেওয়া হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, পশুর হাটে পুরো স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। পশুগুলোকে এমনভাবে রাখতে হবে যাতে ক্রেতারা নিজেদের মধ্যে তিন ফুট দূরাত্ব বজায় রেখে হাটে অবস্থান করতে পারেন। সেভাবেই হাটে গবাদি পশু তুলতে হবে। হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা সকলকে মাস্ক পরতে হবে। পশু কিনতে দু’জনের বেশি হাটে যেতে পারবেন না। হাটের আয়তন অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব রেখে যতো জন ক্রেতা একসংগে প্রবেশ করতে পারেন, ততোজন প্রবেশ করবেন। বাকিরা বাইরে অপো করে পর্যায়ক্রমে প্রবেশ করবেন। হাটে প্রবেশের পথে শরীরের তাপমাত্রা মাপা ও সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকবে। হাটের ভেতরেও থাকবে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থাও রাখতে হবে প্রতিটি হাটে। এছাড়া হাটে আইসোলেশন সেন্টার এবং মেডিক্যাল টিম থাকবে। প্রয়োজন হলে তাঁরা কাউকে দ্রুত আইসোলেশন সেন্টারে নিয়ে যাবেন। এছাড়া থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং জাল টাকা চিহ্নিত করার বুথ। কোনো হাটে জোর করে গরু নেওয়া যাবে না। পশুর হাটের ইজারাদাররা শর্ত না মানলে তাদের ইজারা বাতিল করা হবে। ক্রেতা বা বিক্রেতা যারাই স্বাস্থ্যবিধি মানবেন না, মাস্ক পরবেন না, তাঁরা জরিমানাসহ শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন। এর কোটাই মানা হচ্ছেনা অস্থায়ী পশুর হাট দুটোতে।

স্বাস্থ্যবিধি উপেতি হলেও উপজেলা প্রশাসনের নেই কোন নজরদারী। এছাড়াও বিক্রেতা পাইকার ও খামারীদের অভিযোগ, গরু প্রতি একহাজার থেকে দেড় হাজার টাকা খাজনা নেয়া হলেও তাদের জন্য থাকা খাওয়াসহ বিশেষ কোন সুবিধা দেয়া হয় না হাট কমিটি থেকে।

গৈলা ইউপি চেয়ারম্যান ও হাট ইজারা কমিটির সভাপতি শফিকুল হোসেন টিটু পাইকারদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, হাটে পশু নিয়ে আসা পাইকার ও খামারীদের ইউনিয়ন পরিষদের দোতলায় থাকার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া তার হাটে কোন খাজনা নেয়া হয় না, যারা পশু কেনেন তারা যে আর্থিক সহযোগীতা করেন তাই নেয়া হয়। তিনি আরও বলেন, হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য সবাইকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

রাজিহার হাটের ইজারাদার জোনায়েত মোল্লা বলেন, প্রথম দিনে সকালে ৪০টি গরুর মধ্যে ১৪টি বিক্রি হয়েছে। পাইকার ও দুরের ক্রেতাদের অবিযোগ অস্বিকার করে তিনি আরও বলেন, তাদের খাবারের জন্য বাজারে একটি হোটেল সব সময় খোলা রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। থাকার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের রুম ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএএফপিও) ডা. বখতিয়ার আল মামুন বলেন, সরকার লকডাউন শিথিল করেছে ঠিক, তার জন্য এলাকায় গরুর হাট বসানো ঠিক হয় নি। তার পরেও যারা অনুমতি পেয়েছে তাদের স্বাস্থ্যবিধি পালনের জন্য বিশেষ কিছু শর্ত আরোপ করেছে সরকার, যা হাট কমিটি প্রতিপালন করছে না। ফলে পশুর হাট থেকে করোনা সংক্রমনের ঝুঁকি এখন সবচেয়ে বেশী বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আবুল হাশেম বলেন, পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করা হলে ভ্রমমান আদালতের মাধ্যমে সর্বচ্চ আইনি ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com