সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৮ পূর্বাহ্ন
লাইফস্টাইল ডেস্ক: ” ঘুমিয়ে নয়, শিশুর পিতা জাগ্রত রবে অন্তরে
শেখাতে হবে ভালোমন্দ, পৌছাতে সঠিক বন্দরে! ”
★কেন শিখবে শিশু পরিবারের কাছ থেকে?
★শেখার শুরু পরিবার থেকেই। আচার আচরণ, কথা বলা, চলাফেরা, খাওয়াদাওয়া, আদবকায়দা সবই যে শিখে পরিবারের গুরুজনদের কাছ থেকে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা একটা মানুষকে শিক্ষিত করে, তার কর্মক্ষেত্র ঠিক করে দেয় কিন্তু তার চরিত্র, সে কেমন মানুষ হবে তা ঠিক করে পারিবারিক শিক্ষা।
★কি শিখবে শিশু পরিবার থেকে?
★পারিবারিক মূল্যবোধ, অন্যের সাথে কিভাবে সুন্দর আচরণ করতে হয়, ছোটদের আদর এবং বড়দের কিভাবে শ্রদ্ধা করতে হয়। ভালো গুণগুলো চর্চা করা ও যা কিছু খারাপ অভ্যাস তাকে বর্জন করা। অযথা জিদ না করা ও নিজের সামর্থ্য অনুয়ায়ী চলা বা আবদার করা। নিজেকেই শুধু না, নিজের চারপাশ গুছিয়ে রাখা ও সুন্দর করে রাখা; এর সবই শিশু শিখবে পরিবারের কাছ থেকে।
★কিভাবে শিখবে শিশু পরিবার থেকে?
★গল্প বা খেলার ছলে শিশু নীতিকথা শিখবে, মনীষীদের জীবন থেকে শিখবে কিভাবে সঠিকপথে চলতে হয়, রুপকথা থেকে শিখবে কিভাবে কল্পনা শক্তিকে কাজে লাগাতে হয়। পরিবারের গুরুজনদের কাছ থেকে শিখবে কিভাবে ছোটবড় সবার সাথে আচরণ করতে হয়, ধনীগরীবের পার্থক্য না করে অসহায় দরিদ্রদের সাথে ভালো ব্যবহার করা, তাদের সাহায্য করা, সত্যিকথা বলা ও মিথ্যাকে বর্জন করা।
অপচয় না করা, অযথা অপচয় না করা, সমবয়সী দের সাথে সদভাব রেখে চলা, ছেলেমেয়ে পার্থক্য না করা, মেয়েদের সন্মান করা সবই কিন্তু পরিবার থেকে দেখেই শিখে শিশু।
★ভুল কি শিখছে শিশু পরিবার থেকে?
★শিশুকে অতিরিক্ত শাসন করলে সে ভয় থেকে কিছুই শিখতে পারে না, পরনির্ভরশীল হয়ে ওঠে। আবার অতিরিক্ত আদর করলে বেপরোয়া, উচ্ছৃঙ্খল হয়ে যেতে পারে।
শিশুর সামনে ঝগড়া বিবাদ করলে বা মিথ্যা কথা বললে, গুরুজনকে সন্মান না দেখালে, অন্যের বদনাম করলে, গরীবকে অপমান বা মারধোর করলে, শিশু বড় হয়ে সেরকম আচরনকেই স্বাভাবিক ধরে নিয়ে নিজেও একই রকম ব্যবহার করবে।
ছোট থেকেই তাকে সময়ের মূল্য না বুঝালে সে অলস হবে, টাকার মূল্য না বুঝালে অমিতব্যয়ী হবে, ভালো ব্যবহার করা না শেখালে সে বদমেজাজি ও বেয়াদব হবে।
আমরা অনেকেই মনে করি, শিশুদের কখনো না বলতে নেই, তারা যা চায় সামর্থ্য থাকলে তা দেয়াই উচিত। কিন্তু ভুলে যাই জিদ করে কিছু পেলে সে পরবর্তীতে আরো বেশী জিদ করবে বা এমনকিছু চাইবে যা দেয়া সম্ভব নয়, তখন পরিস্থিতি গুরুতর হতে পারে। এরকম অনেক উদাহরণ আমরা পেয়েছি সমাজে, চেয়ে না পেয়ে সন্তান পিতামাতার উপর হাত তুলেছে, খুনও করেছে।
সন্তানের সামনে আপনি কাজের লোককে বা রিকশাওয়ালাকে মারলেন, শিশুর মনে করবে গরীবদের মারাটাই বুঝি ঠিক, বড় হয়ে সে গরীবদের হক মেরে খাবে।
বাচ্চার সামনে নিজেরা ঝগড়াঝাটি করলেন, বাড়ির বয়স্ক মানুষটিকে বকাঝকা বা অবহেলা করলেন, ভবিষ্যতে এই শিশুটিও পারিবারিক কলহে জড়াবে, ঘুরেফিরে আপনাকেই অবহেলা করবে, বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাবে, দায়ী কি আপনিই নন?
টাকাই সব এমন শেখা শিশুটিই একদিন ভেজাল মেশানো ব্যবসায়ী হবে, খাদ্য সামগ্রী স্টক করে দাম বাড়াবে, খাবারে বিষাক্ত ক্যামিক্যাল মেশাবে, নকল দ্রব্য বিক্রি করবে, এরজন্য কি আপনিই দায়ী ছিলেন না?
কারনে অকারনে মিথ্যা কথা বলা আপনাকে দেখে আপনার শিশু কি শিখবে? মিথ্যা কথা বলাই সহজ, যে কোন ঝামেলা এড়ানো যায়। এই শিশু নেতা হবে, মিথ্যা কথা বলে জনগণকে ধোঁকা দিলে দায়ভারটা কার?
সুশিক্ষিত না হলে, ধর্মীয় অনুশাসন না মানলে শিশুটি বড় হয়ে বকধার্মিক হবে, ধর্মকে ব্যবসায় পরিনত করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, ভুল শিক্ষা দিবে, অমানুষ তৈরী করবে আরো।
★কিভাবে শেখাবেন শিশুকে?
★পরিবারে সবার সাথে সুসম্পর্ক রেখে শিশুকে সঠিক শিক্ষা দিতে হবে।
গল্প, ছড়া, ছবি দিয়ে নীতিকথা, জীবন আদর্শ, সময়ের মূল্য, ভালো মানুষ হয়ে গড়ে উঠার শিক্ষা দিতে হবে।
ব্যস্ততার মাঝেও একটু সময় বের করে শিশুকে কোয়ালিটি টাইম দিতে হবে। তার কথাও শুনতে হবে, পারিবারিক বন্ধনগুলো শক্ত করতে হবে।
সামর্থ্য থাকলেও শিশুর জিদকে প্রশ্রয় দিবেন না। বরং তাকে টাকা অপচয়ের খারাপদিকগুলো বুঝাতে হবে, সাথে সাথে আবদার পূরণ না করে পরবর্তীতে কোন একটা ভালো কাজের পুরস্কার স্বরুপ ঐ জিনিস দিতে হবে যেন সে উৎসাহ পায় ভালো কাজ করার, ধৈর্য্য ধরা শেখে ভালো কিছুর জন্য এবং টাকার অপচয় করা না শেখে৷
মিথ্যাকথা বলা সব অন্যায়ের মূল কারণ। শিশুর সামনে কখনো কাউকে মিথ্যাকথা বলবেন না, কোন মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিবেন না। সত্যকথা বলাটা উৎসাহিত করতে হবে। ভয় পেয়ে মিথ্যা কথা বলা বা সত্য গোপন করাটা কোন সমাধান নয়, বরং খারাপ এটা তাকে বোঝাতে হবে।
শাসন না করা যেমন উচিত নয়, তেমনি কড়া শাসনও খারাপ। শিশুর মনে ভয় তৈরি করলে সে কিছু শিখতে পারে না, তার মানসিক গঠন পরিপূর্ণতা পায় না, কোন কাজ নিজে নিজে ঠিকমতো করতে পারে না। বড় হয়ে স্বাবলম্বী হতে পারে না, পরের উপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠে।
টিভি, কম্পিউটার, মোবাইল সবই জড় পদার্থ। এসব থেকে শিশু কোন মানবিক গুণাবলি শিখতে পারেনা। ফলে অনুভূতিহীন, যান্ত্রিক মানুষে পরিনত হয়। মাটির সাথে নাড়ীর টান বিচ্ছিন্ন হয়। শিশুকে প্রকৃতির কাছাকাছি নিতে হবে, ঘাসের স্পর্শ চেনাতে হবে, ফুলের ঘ্রাণ চিনতে হবে, সবুজ পাতার রং চিনতে হবে, আকাশ নদীর রং চিনতে হবে, তবেই সে মানবিক হবে, জীবনটাকে রঙিন করতে শিখবে, কল্পনা শক্তিশালী বাড়বে, নতুন কিছু আবিস্কারের নেশায় মাতবে। বিজ্ঞানের প্রসার ঘটবে, অন্ধকার দূর হয়ে পৃথিবী আলোকিত হবে।
ভালো কিছু পেতে হলে, নিজের ভালোটা দিতে হবে। পৃথিবী বাসযোগ্য করতে হলে, শিশুকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, যন্ত্র নয়।