সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৪০ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশা নির্মূলে মাসব্যাপী বিশেষ অভিযানের তৃতীয় দিনে ৪টি সরকারি প্রতিষ্ঠানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় হতাশা প্রকাশা করেন ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। এ সময় ৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৫ লাখ টাকা করে মোট ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
সোমবার (১০ জুলাই) ডিএনসিসির আওতাধীন কারওয়ান বাজার এলাকায় তৃতীয় দিনের মতো ডেঙ্গু বিরোধী মশক নিধন ঝটিকা অভিযানে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে এ জরিমানা করা হয়।
জরিমানা আদায় করেন নির্বাহী মেজিস্ট্রেট মো. মোতাকাব্বির আহমেদ।
এদিন বেলা ১১টায় ডেঙ্গু বিরোধী অভিযানে কাওরানবাজারের জাহাঙ্গীর টাওয়ারে মশার লার্ভা দেখতে পান মেয়র আতিকুল ইসলাম। এ সময় ভবন কর্তৃপক্ষ অফিস রুম তালা দিয়ে অন্য কোথাও চলে যান। পরবর্তীতে মেয়র সে তালা থাকা অবস্থায় নতুন করে আরেকটি তালা লাগিয়ে দেয়। ভবন কর্তৃপক্ষকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এরপর কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলা ভবনের বেজমেন্ট পরিদর্শন করেন। সেখানে নির্মাণাধীন ড্রেনে এডিস মশার লার্ভার সন্ধান পান মেয়র আতিকুল ইসলাম। এডিস মশার লার্ভা থাকায় পরবর্তীতে পেট্রোবাংলাকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এরপর দুপুর ১২টায় যমুনা ভবনে অভিযান পরিচালনা করে। ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকায় সেখানেও এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। পরে ভবন কর্তৃপক্ষকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
পরবর্তীতে দুপুর সাড়ে ১২টায় টিসিবি ভবনের বেজমেন্টে গাড়ি ধোয়ার স্থানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। পরে টিসিবি ভবন কর্তৃপক্ষকেও ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এরপর দুপুর দেড়টায় বিটিএমসি ভবনে অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেখানে পার্কিংয়ে জমে থাকা হাউজে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এর পর দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে প্রথম আলো ভবনের বেজমেন্টে এডিস মশার লার্ভা দেখতে অভিযান করা হয়। সেখানে মশার লার্ভা না পাওয়ায় কোনো জরিমানা করা হয়নি।
এরপর দুপুর ২টায় কাওরানবাজার ওয়াসা ভবন পরিদর্শন করেন। সেখানে কোনো ধরনের লার্ভা না পাওয়ায় কোনো জরিমানা করা হয়নি। এরপর অভিযান শেষ করা হয়।
অভিযানের বিষয়ে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, দায়িত্ব পালন শুধু মুখে মুখেই, বাস্তবে কেউ দায়িত্ব পালন করছে না। পেট্রোবাংলা একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিচেও মশার চাষ হচ্ছে। পেট্রোবাংলার গাড়ির বেজমেন্টের নিচে ড্রেনের কাজ হচ্ছে সেখানে আমি মশার লার্ভা দেখতে পেয়েছি। এর আগে জাহাঙ্গীর টাওয়ারে গেলাম সেখানেও মশার লার্ভা দেখতে পেয়েছি। সরকারি প্রতিষ্ঠানে এডিস মশাল লার্ভা পাওয়া খুবই দুঃখজনক এবং অত্যন্ত হতাশাজনক। এসব সরকারি প্রতিষ্ঠানের সবার সঙ্গে মিটিং হয়েছে, তারা বলেছে দায়িত্ব পালন করবে। কিন্তু এ দায়িত্ব পালন শুধু মুখে মুখেই, বাস্তবে কেউ দায়িত্ব পালন করছে না। দায়িত্ব পালন করলে সরকারি প্রতিষ্ঠানে মশার লার্ভা পেতাম না।
মেয়র বলেন, আজকে পেট্রোবাংলাকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সে জরিমানা তো করতে হতো না, যদি তারা ন্যূনতম দায়িত্ব নিত। এখন একটু ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিন তাহলে তো হয়ে যায়। আমি মনে করি সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। এ দায়িত্ব এক সিটি করপোরেশেনের ওপর দিলে হবে না। আমি মনে করি এ শহর আমাদের সবার। আমি সবাইকে অনুরোধ করব আপনারা বরং ফাইন না দিয়ে এগিয়ে আসুন সবাই।
জরিমানা করার বিষয়ে নির্বাহী মেজিস্ট্রেট মো মোতাকাব্বির আহমেদ বলেন, ডেঙ্গু মশার প্রকোপে গতকাল ছয়জন মারা গেছে। যেকোনো মৃত্যুই আমাদের কাছে বেদনাদায়ক। আজকে বিভিন্ন নামকরা সরকারি প্রতিষ্ঠানের আন্ডারগ্রাউন্ড গাড়ি পার্কিংয়ের বেজমেন্টে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এছাড়া বেশ কয়েকটি মিডিয়া ভবনেও অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসব ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে বা পার্কিংয়ে যারা দায়িত্ব পালন করে তারা তাদের কাজটি ঠিকমতো করেনি। তাই উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার উপস্থিতে দণ্ড বিধি ২৬৯ এর আওতায় এসব ভবন কর্তৃপক্ষকে জরিমানা করা হয়। আজকে ৪টি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে মোট ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এ জরিমানা হচ্ছে একটা মেসেজ, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
এডিস মশার লার্ভা পাওয়ার বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, আমাদের বেজমেন্ট এর নিচে ড্রেনের কাজ করা হচ্ছে। আমরা অনেক সতর্ক ছিলাম। যদি কাজ করা অবস্থায় এখানে মশার লার্ভা পাওয়া যায় তাহলে এটি ঠিকাদারের দোষ। তাই আমরা এ বিষয়টি চিহ্নিত করে আসল দোষ কার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। আর ঠিকাদারের বিরুদ্ধে যদি তা প্রমাণ হয় তাহলে ৫ লাখ টাকা জরিমানা তাদের থেকে আদায় করা হবে। অথবা আমাদের চাকরি বিধি অনুসারে জরিমানা দেওয়া হবে।
কারওয়ান বাজার ছাড়াও দশটি অঞ্চলেই আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান পরিচালনা করেন।
ডিএনসিসির বিভিন্ন এলাকায় মশক নিধন অভিযান এবং জনসচেতনতামূলক কর্মসূচিতে অংশ নেন ডিএনসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম শফিকুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহম্মদ আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এসএম শরিফ-উল ইসলাম, সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিসুর রহমান ও বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।