বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৬ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সদস্য হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা খ. ম. আমীর আলী ছাত্র বৈষম্য আন্দোলনে আহতদের জন্য আর্থিক সহায়তা নিয়ে পাশে বিএনপি নেতা মোঃ সাইফুল ইসলাম নরসিংদীর মনোহরদীতে প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানক্লাব ‘নেবুলাস’-এর যাত্রা শুরু প্রথমবারের মতো সচিবালয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস গার্মেন্টস ব্যবসায়িদের নিঃস্ব করে কোটি টাকা প্রতারণা করে লাপাত্তা কৃষক লীগ নেতা হান্নান শেখ! টাকার বিনিময়ে বিদ্যুতের তার খাম্বা মিটার এনে দেন ইলেকট্রিশিয়ান জুলিয়ান! নবান্ন উৎসব ঘিরে জমে উঠেছে কালাইয়ে মাছের মেলা কটিয়াদীতে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের সম্বর্ধনা জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত না-হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকতে হবে: রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু কেমুসাস সাহিত্য পুরস্কার পেলেন সব্যসাচী লেখক মীর লিয়াকত আলী
শহীদ সাগ্নিক : দগ্ধ ভুবনের বিদগ্ধ কবি

শহীদ সাগ্নিক : দগ্ধ ভুবনের বিদগ্ধ কবি

হিমু আহমেদ-এর প্রতিবেদন:

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন ‘বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী’। কবি শহীদ সাগ্নিক ঠিক সেরকম না হলেও বোহেমিয়ান টাইপের এক ভবঘুরে কবি। নানার কাছে শুনেছিলাম কবি শহীদ সাগ্নিকের আম্মা কোন এক সম্পর্কে নানার ভাগ্নি। মাঝে মাঝে তিনি নানার কাছে আসতেন। ছেলে শহীদ সাগ্নিককে নিয়ে তাঁর দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না। ভবঘুরে এবং অস্থির স্বভাবের এ ছেলেকে স্থির অবস্থানে নিয়ে আসার জন্য তিনি নানার কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। তখন প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ছিলেন জনাব এরশাদ আলী। সম্পর্কে তিনি নানার জামাতা। তৎকালীন সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পেশায় প্রবেশ করা খুব একটা কঠিন কাজ ছিল না। সরাসরি জামাতার নিকট শহীদ সাগ্নিকের চাকরির ব্যাপারে সুপারিশ করাটা ছিল অস্বস্তিকর। তাই তিনি তার এক নিকট আত্মীয় জুনাব আলীকে এ দায়িত্ব দিয়েছিলেন। জুনাব আলী এলাকার আরো দু-একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জনাব এরশাদ আলীর সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার যথেষ্ট দক্ষতা ও যোগ্যতার অধিকারী ছিলেন শহীদ সাগ্নিক। তাই সহজেই তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগলাভ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

কবি শহীদ সাগ্নিকের আম্মা ভেবেছিলেন ছেলে হয়তো এবার একটু স্থির হবে। কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও কবি শহীদ সাগ্নিকের ভবঘুরে জীবনের অবসান ঘটেনি। তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি বিপ্লবী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। তার মুখে সব সময় থাকত শ্রেণীসংগ্রামের কথা। মার্কসবাদ, লেলিনবাদের মতবাদে বিশ্বাসী এ কবি সারাটি জীবন কাটিয়েছেন একটি ঘোরের মধ্যে। একসময় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের কেন্দ্রভূমি সোভিয়েট ইউনিয়নের পতন ঘটলেও কবি শহীদ সাগ্নিকের মত স্বঘোষিত বিপ্লবীদের সমাজতন্ত্রের নেশা কাটেনি।

কবি শহীদ সাগ্নিকের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল কিশোর খেলাঘর আসরের মাধ্যমে। আমি তখন শমশেরনগর এএটিএম উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছিলাম। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর পাশাপাশি কিশোরদেরকেও তাদের আদর্শে উজ্জীবিত করার লক্ষে খেলাঘর আসরের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতো। কবি শহীদ সাগ্নিকও শমশেরনগরে পুনর্গঠন করেছিলেন ‘কিশোর খেলাঘর আসর’। ১৯৫৬ সালে তৎকালীন বৃহত্তর সিলেটের প্রথম শাখা হিসাবে শমশেরনগরে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ‘কিশোর খেলাঘর আসর’। প্রগতিশীল ছাত্রনেতা মফিজ আলী এবং সৈয়দ মতিউর রহমানের উদ্যোগে এ সংগঠনটি গড়ে তোলা হয়েছিল। ‘কিশোর খেলাঘর আসর’ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন আব্দুল মান্নান এবং সম্পাদক ছিলেন আব্দুস সালাম চৌধুরী। ১৯৬৫ সালে এই সংগঠনটিকে আবার পুনর্গঠন করা হয়েছিল। তখন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন শহীদ সাগ্নিক এবং সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন খালেকুর রহমান। বিভিন্ন সময়ে সম্পাদকের দায়িত্ব বিভিন্নজনের উপর অর্পণ করা হলেও সংগঠক হিসেবে দীর্ঘমেয়াদী দায়িত্ব পালন করেছিলেন শহীদ সাগ্নিক। এতে তিনি সফলও হয়েছিলেন। আমাদের মত কিছু কিশোর-তরুণের সাথে কবি শহীদ সাগ্নিকের একটি অসমবয়সী বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। অবশ্য সেই সম্পর্কটা ছিল শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আকর্ষণের কারণে। এখানে কারো কোন রাজনৈতিক সংযোগ ছিল না। মাঝে মাঝে অনাড়ম্বর পরিবেশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার সুবাদে আমাদের একে অন্যের সাথে একটি অদ্ভুত সহমর্মিতার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছিল।

মূলত লেখালেখির সুবাদেই কবি শহীদ সাগ্নিকের সাথে আমার জীবনের একটি বড় অংশ জড়িয়ে পড়েছিল। যদিও আমার আদর্শ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমার আদর্শ ছিল মানবতা ও সাম্যের মেলবন্ধনের সংযোগস্থলে। শুধুমাত্র সাম্যের কারণে কবি শহীদ সাগ্নিকের সাথে আমার কর্মকাণ্ড অব্যাহত ছিল। কিন্তু সমাজতন্ত্র এবং বিপ্লবের নেশায় বিভোর হয়ে থাকা কবি শহীদ সাগ্নিক সেটা কখনো অনুভব করতে পারেননি। উপলব্ধি করার সামান্যতম চেষ্টাও করেননি। তিনি সবসময় তাঁর কথা বলতেই পছন্দ করতেন। অন্যের কথা তিনি কমই শুনতে চাইতেন। এক কথায় বললে বলতে হয় তিনি ছিলেন প্রচণ্ড আত্মকেন্দ্রিক। তারপরও তাকে আমরা পছন্দ করতাম তাঁর শক্তিশালী ছড়া লেখার কারণে। কবি শহীদ সাগ্নিকের সহজাত সুর, তাল, লয় এবং অন্তমিলসমৃদ্ধ ছড়ার প্রতি আমরা আকৃষ্ট ছিলাম।

কবি শহীদ সাগ্নিকের কবিতা লেখার হাতও ছিল চমৎকার। মাইকেল মধুসূদন দত্তের মতো সনেটও তিনি লিখতেন। তাঁর একটি কবিতার শেষের দুটি লাইন আমার মাথায় স্থায়ীভাবে আসন গেড়ে বসেছিল। এ দুটি লাইন হচ্ছে-

‘লাঘাটার’ স্নিগ্ধস্রোত যেইরূপ চিরন্তন বহে,
কবিতারো শুদ্ধ-প্রেম সেইরূপ চিরঞ্জীব রহে।

কবি শহীদ সাগ্নিক জানতেন তার ছড়া লেখার হাত বেশ শক্তিশালী। এজন্য তিনি বেশ গর্ববোধও করতেন। জেনে হোক কিংবা না জেনে হোক অথবা প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসের কারণেই হোক তিনি নিজের ঢাক নিজেই পেটাতেন। হয়তো মনের অজান্তে কিংবা সহজাত প্রবৃত্তির বশেই তিনি এই কাজটি করতে পছন্দ করতেন। যে কোন আসরে গেলেই তিনি ফস করে নিজের লেখা একটি ছড়া অথবা কবিতা আবৃত্তি করা শুরু করে দিতেন। শ্রোতা তার এ আবৃত্তি শুনতে পছন্দ করছেন নাকি বিরক্ত হচ্ছেন- এসবের তোয়াক্কাই তিনি করতেন না।

কবি শহীদ সাগ্নিকের আরেকটি বিরক্তিকর অভ্যাস আছে। হয়তো গল্প করতে করতে একসাথে হাঁটছি, হঠাৎ কাউকে সামনে পেয়ে তিনি থেমে গেলেন। কুশলাদি জিজ্ঞেস করতে করতে গল্প শুরু করে দিলেন। সঙ্গী হিসেবে আমিই থাকি বা যে কেউ থাকুক, তিনি সেসব ভুলেই যেতেন। এতকিছুর পরেও কেন যে আমি তাঁর সাথে চলাফেরা করতে পছন্দ করতাম কিংবা এখনো করি, তার ব্যাখ্যা নিজেও জানি না। তাঁর সাথে চলাফেরার কারণে এলাকার অনেকেই আমাকে কমিউনিস্ট হিসেবে আখ্যায়িত করতেন। কিন্তু আমি কোনকালেই কমিউনিস্টদের আদর্শে বিশ্বাস করতাম না। কারণ দেশে-বিদেশে কমিউনিস্টরা মুখে আদর্শের বুলি প্রচার করলেও ব্যক্তিগত জীবনে তারা উল্টো স্রোতে অবগাহন করতেন। হাতে গোণা কয়েকজন ছাড়া অধিকাংশ কমিউনিস্ট নেতাই বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন।

কবি শহীদ সাগ্নিক ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে কাব্য চর্চা শুরু করেছিলেন। গণমানুষের কবি দিলওয়ারের মতো মাতৃভূমি ও গণমানুষের প্রতি তার ছিল অগাধ ভালবাসা। তাই বেশিরভাগ কবিতায় তিনি মাতৃভূমি ও গণমানুষের নিত্যনৈমিত্তিক উপলব্ধি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।

কবি শহীদ সাগ্নিক তাঁর কবিতা এবং রচনায় শক্তিশালী শব্দের গাঁথুনি দিয়ে বিশাল অট্টালিকা নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর লেখায় শব্দের কারুকাজ দেখে তাঁকে এক কথায় ‘শব্দের কারিগর’ হিসেবে উল্লেখ করা যায়। কবি শহীদ সাগ্নিক তাঁর রচনা সমগ্র-১ প্রকাশ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছিলেন, ‘ক্ষুদ্র এই জীবনে মানুষের অপার ভালবাসা ও মহানুভবতা যেমন আবাল্য আমাকে করেছে আপ্লুত, তেমনি আত্মকেন্দ্রিক নীচতা, হিংস্রতায় করেছে বিক্ষত, বিপর্যস্ত। জন্মাবধি দেখেছি স্বল্প সংখ্যক মানুষ কর্তৃক সংখ্যাধিক্য নিরন্ন ক্লিষ্ট মানুষের উপর নিষ্ঠুর নিষ্পেষণ ও নির্যাতন’। এই বক্তব্যগুলো তিনি যেভাবে সাবলীল ভঙ্গিমায় উপস্থাপন করেছেন, তেমনি প্রয়োগ করেছেন তার শক্তিশালী কবিতাগুলোতেও। বিভিন্ন কবিতায় তিনি সমাজের অসংগতিকে চিহ্নিত করতেও সক্ষম হয়েছেন। কবিপ্রাণ আব্দুল ওয়াহেদ রেজভীকে উৎসর্গ করে লেখা তাঁর ‘কবিতার শুদ্ধ প্রেম’ নামের সনেটে সেটা মূর্তভাবে ফুটে উঠেছে।

‘এসো আজ হিরন্ময় আকাঙ্খার চতুর্দশপদী
শব্দের দ্বৈরথে চড়ে কল্পনার মায়াকুঞ্জে এসো,
স্নায়ুতে অস্তিত্বে এই শরীরের ছায়াপুঞ্জে এসো প্রত্যয়ের রৌদ্রজালে নির্ঝরের মত নিরবধি।

হৃদয় রাঙানো এক পূর্ণিমার শুভ্র চন্দ্রালোকে,
তোমাকে চেয়েছি ঠিক আটপৌরে গৃহস্থালী ঘরে, প্রাত্যহিক সুষমায় ফুলেল সৌন্দর্যে থরে থরে
চেয়েছি প্রশান্তচিত্তে চিতল হরিণীর মুগ্ধ চোখে।

মানুষ হরিণী কিংবা ষোড়ষীর দৃপ্ত দুই চোখ,
কবিতার স্পর্শে হয় সপ্নীল ফসলে গর্ভজাত, – জাগতিক শক্তিমন্ত্রে ঔজ্জ্বল্যের আলোকসম্পাত- আনন্দে অনিন্দ্য নৃত্যে ঋদ্ধ হোক পূর্ণ মর্ত্যলোক।

‘লাঘাটার’ স্নিগ্ধস্রোত যেইরূপ চিরন্তন বহে,
কবিতারো শুদ্ধ-প্রেম সেইরূপ চিরঞ্জীব রহে।

‘মরমি কবি ইয়াসিন শাহকে’ নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করেছেন তিনি। মৌলবী ইয়াসিন শাহকে সত্যের পূজারী হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার যেমন চেষ্টা তিনি করেছেন, তেমনি ‘শুদ্ধ কবি শ্রী গোবিন্দ দাস’কে নিয়ে তার তীব্র দীর্ঘশ্বাসও ব্যক্ত করেছেন সাবলীল ভঙ্গিমায়।

‘আমিও দেখেছি এই স্বদেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে কতো, উদগ্র লালসা লিপ্ত সুবিধার বক্রক্রিমি ঘোরে। আমিও জেনেছি এই শ্যামাঙ্গনে দৈন্য অবিরত,
সত্যাশ্রয়ী জীবনের শান্তি-সুখ নিত্য মাথা ঘোরে। দুঃখিনী বঙ্গের ঘরে তুমি এক তীব্র দীর্ঘশ্বাস’।

কবি শহীদ সাগ্নিক কথায় কথায় বিপ্লব, শ্রেণীসংগ্রাম, বুর্জোয়া ইত্যাদি শব্দের প্রয়োগ ঘটিয়ে নিজের অজান্তেই শ্রোতাদের বিরক্তি উৎপাদন করতেন। বুর্জোয়া সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তাঁর ছিল তীব্র আক্রোশ। এজন্য কবির এই বৈপ্লবিক বক্তব্য কবিতায়ও উদ্ভাসিত হয়েছে সহজাত প্রবৃত্তিতে।

‘রক্তে বয় অবিরাম বিপ্লবের দুর্জয় প্রপাত।
যুগধর্মে কাব্য এক শ্রেণীহীন মনুষ্য সমাজ,
সদিচ্ছার সূর্যালোকে শব্দের তাইতো কারুকাজ।’

কবি শহীদ সাগ্নিকের শক্তিশালী ছড়া এবং কবিতায় ধারাবাহিকভাবে সমাজ পরিবর্তনের হুংকার উদ্ভাসিত হয়েছে। হয়তো এ কারণেই তার কবিতাগুলো একাগ্রচিত্ত পাঠকের হৃদয় স্পর্শ করে। সার্থক শব্দগাঁথুনির মাধুর্যতায় ছড়া ও কবিতাগুলোও যেন শক্তির বিচ্ছুরণ ঘটায়।

কবি শহীদ সাগ্নিকের রয়েছে তাৎক্ষণিক ছড়া লেখার একটি বিশেষ ক্ষমতা। যে কোনো পরিস্থিতিতে এবং যে কোন স্থানে সাবলীল ছন্দে ছড়া রচনায় সিদ্ধহস্ত প্রতিভা খুব একটা পরিলক্ষিত হয় না। শহীদ সাগ্নিকের এই গুণটির কারণেই তাঁর অনেক ভক্তের সন্ধান পাওয়া যায়। ১৯৮৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বরে রেজভী ভবনে অনুষ্ঠিত কবিতা পাঠের আসরে ‘কবি ওয়াহেদ রেজভীকে’ শিরোনামের এ ছড়াটি ছিল কবি শহীদ সাগ্নিকের তাৎক্ষণিক ছড়া রচনার দক্ষতার একটি প্রমাণ।

ছিলোনা ঠিক জানা
এই যে প্রিয় নানা-
যার ভেতরে ঘুমিয়ে ছিলো
একটি কবি মন,
কার তাড়নায় উঠলো জেগে
আনন্দে আনমন!

আজকে আমার আশা
প্রানের সকল ভাষা-
হোক আরো নির্ভুল,-
বাজুক বীণা নানান গানে-
নতুন আশায় নতুন তানে-
উঠুক ফুটে শত ধারায়
প্রাণের শত ফুল!

কবি শহীদ সাগ্নিকের বোহেমিয়ান টাইপের জীবনযাপন আমার মোটেও পছন্দের নয়। কিন্তু তারপরও তিনি যেন এ জীবনেই খুঁজে পেয়েছেন জীবনের প্রগাঢ় তত্ত্ব। তাঁর জীবনের মধ্যবয়সের একটি ঘটনা সেই ইঙ্গিতই বহন করে। ঈদের আগের রাতে তিনি বের হয়েছিলেন কিছু বাজার-সদাই করার জন্য। পরিচিত দোকানে বাজারের লিস্ট এবং ব্যাগ রেখে তিনি হঠাৎ উধাও হয়ে গিয়েছিলেন। গভীর রাতেও শহীদ সাগ্নিকের আর দেখা না পাওয়ায় দোকানদার ভদ্রলোক উপায়ান্তর না দেখে বাজারের ব্যাগটি তাঁর বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। ঈদের দুইদিন পরে অবশ্য তাঁর সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। জানা গিয়েছিল তিনি পরিচিত মানুষের সাথে চলে গিয়েছিলেন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কৈলাশহরে। ঈদ উপলক্ষে সীমান্তে কিছু শিথিলতা থাকার সুযোগে সবাই নাকি সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেই সময়ে মোবাইল ফোনের কোন সুবিধা না থাকায় তিনি তাঁর এ অন্তর্ধানের সংবাদটি পরিবারের কাছে পাঠাতে সক্ষম হননি।

বোহেমিয়ান এই কবির বয়স এখন ৭৫ বছর। এই বয়সে এখনো তিনি ঘুরে বেড়ান সৌরজগতের গ্রহগুলোর মত। ঘোরাঘুরির এই নেশাটা না থাকলে হয়তো তাঁর শক্তিশালী লেখাগুলোর কল্যাণে বাংলা সাহিত্য আরও সমৃদ্ধ হতো। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি এখন মনোযোগ দিয়েছেন তাঁর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লেখাগুলো একত্রিত করার কাজে। অবশ্য এই অধারাবাহিক জীবনে তিনি পুঁথিসাহিত্যের ছন্দে ‘আমার সকল সাধবাসনা’ নামের দীর্ঘ কাব্য লিখে যাচ্ছেন বেশ কয়েক বছর ধরেই। এই কাব্যে তিনি তার জীবনের সাফল্য-ব্যর্থতা এবং কর্মকাহিনী ফুটিয়ে তুলেছেন বেশ সাবলীলভাবেই। সকলের প্রত্যাশা মফস্বলে পড়ে থাকা এ শক্তিমান দগ্ধ ভুবনের বিদগ্ধ কবির ‘রচনা সমগ্র-২’ প্রকাশিত হলে তা বাংলা সাহিত্যকে আরও সমৃদ্ধ করবে।

হিমু আহমেদ
himuahmed964011@gmail.com

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com