শুক্রবার, ২৫ Jul ২০২৫, ১০:০৩ অপরাহ্ন
নেত্রকোনা প্রতিনিধি:
নেত্রকোনার আটপাড়ায় স্কুলের ভেতরে ঢুকে নারী শিক্ষিকাকে হেনস্তার অভিযোগ তুলে এক প্রধান শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় যুবদল ও ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে।
গত বুধবার (২৩ জুলাই) দুপুরে ১টায় উপজেলার অভয়পাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভুগী শিক্ষক ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষক বর্তমানে নেত্রকোনা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
অভিযোগে জানা যায়, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম কয়েক দিন আগে যথাসময়ে স্কুলে উপস্থিত না হওয়ায় সহকারী শিক্ষক রুবি আক্তারকে শোকজ করেন। এ শোকজপত্র শিক্ষিকা রুবি আক্তার বাড়িতে নিলে তাঁর স্বামী কামাল কাগজটি দেখে বিষয়টি যুবদল নেতা হাফিজুর রহমান মিষ্টারকে জানায়।
পরে বুধবার দুপুর ১টার দিকে যুবদল নেতা হাফিজুর রহমান মিষ্টার ও উপজেলা ছাত্রদল সদস্য মুন্না খান শাহীন বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে প্রধান শিক্ষককে প্রথমে ‘মহিলাদের ইভটিজিং’ করার অভিযোগে হেনস্তা করেন।
একপর্যায়ে শাহীন নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন। প্রধান শিক্ষক উক্ত ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে গেলে তারা বাধা দিয়ে পাঞ্জাবীর কলার ধরে বাইরে নিয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করেন জাহাঙ্গীর আলম।
এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী তাসলিমা কোহেন (সহকারী শিক্ষক, ছয়াশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে ওই ঘটনার জন্য সহকারী শিক্ষক রুবি আক্তারকে চড় মারেন বলে জানা যায় ও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওতে দেখা যায়।
ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আমি নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিতি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব পালন করি। সহকারী শিক্ষক রুবি আক্তার নিয়মিত স্কুলে দেরি করে আসছিলেন বলে তাঁকে নিয়ম মাফিক শোকজ করা হয়। এটা কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নয়, পুরোপুরি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাপার। বুধবার স্কুল চলাকালীন হঠাৎ হাফিজুর মিষ্টার ও মুন্না খান শাহীন স্কুলে এসে আমাকে উল্টো ‘মহিলা শিক্ষকদের ইভটিজিং’-এর মতো মিথ্যা অভিযোগে অপমান করে। আমি যখন বিষয়টি ভিডিও করতে চেয়েছিলাম, তখন তারা আমাকে কলার ধরে বাইরে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।”
ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা মুন্না খান শাহীনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে তিনি তার ব্যক্তিগত ফেইসবুকের একাধিক পোস্টে
প্রধান শিক্ষকের স্ত্রীর চড় দেওয়ার ভিডিওটি পোস্ট করেছেন।
অপর অভিযুক্ত যুবদল নেতা হাফিজুর রহমান মিষ্টার সাংবাদিকদের বলেন, “রুবি আক্তার আমার চাচী। প্রধান শিক্ষক বেশ কিছুদিন ধরে তাঁকে অশালীন প্রস্তাব দিচ্ছিলেন। আমি এ বিষয়ে জানতে গিয়েছিলাম। তিনি উল্টো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। কোনো মারধরের ঘটনা ঘটেনি। বরং এর আগেও ওই শিক্ষক অন্য এক নারী সহকর্মীকেও কুপ্রস্তাব দিয়ে হয়রানি করেছিলেন, যা পরে মিমাংসা করে দেওয়া হয়।”
এ বিষয়ে বিদ্যালয়টির সহকারি শিক্ষিকা রুবির অভিযোগ, ১৯৯৮ সাল থেকে শিক্ষকতা পেশায় রয়েছেন তিনি। সময়মতো বিদ্যালয়ে উপস্থিতিও রয়েছে তার। কিন্ত গত কয়েক মাস ধরেই প্রধান শিক্ষক নানা ভাবে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যসহ অশালীন আচরন করছেন। যা কোন ভাবেই কাম্য হতে পারে না। সম্প্রতি আমাকে শোকজ করেছে। বিষয়টি ভাতিজা মিষ্টার ও শাহিন কে অবগত করেছিমাত্র। পরে তারা প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে আমাকেসহ তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন প্রধান শিক্ষক।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আহসান উল্লাহ মুকুল বলেন, “আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের পাঞ্জাবি ছেঁড়া অবস্থায় দেখেছি। মারধরের ব্যাপারে নিশ্চিত না হলেও শিক্ষক রুবিকে শোকজ করা হয়েছিল, সেটি জানি। তবে কোনো নারী শিক্ষক আমার কাছে শ্লীলতাহানির বা কুপ্রস্তাব এর লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ করেননি।”
আটপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। শুনেছি প্রধান শিক্ষককে দুইজন ব্যক্তি মারধর করেছে। এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”