রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৭ অপরাহ্ন
ক্রীড়া প্রতিবেদক : ঘরোয়া ক্রিকেটে যাঁরা নিয়মিত রানের ফোয়ারা ছোটান, মোহাম্মদ মিঠুন তাঁদের অন্যতম। দুটো টেস্ট খেলার পর যাঁর সত্যভাষণ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কঠিন জগতে যেকোনো নবাগতের আগাম প্রস্তুতিতে ভীষণ সহায়কও হয়ে উঠতে পারে।
জীবনের প্রথম টেস্ট ইনিংসে শূন্য রানে আউট হওয়া মিঠুন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পরের ইনিংসেই খেলেছিলেন ৬৭ রানের ইনিংস। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে দুই ইনিংসেই বাজে শটে উইকেট বিলানো মিঠুন করেন ২০ ও ১৭ রান। দুই টেস্টের অভিজ্ঞতায় যিনি এ উপসংহারেই পৌঁছে গেছেন যে ‘এখানে পার্থক্য হচ্ছে, টেস্টে বোলার অনেক মানসম্পন্ন থাকে। তা ছাড়া যে কন্ডিশনে খেলা হচ্ছে, এখানে অবশ্যই ব্যাটিংটা কঠিন। আমরা তো ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে খেলছি না। ঘরোয়া ক্রিকেটে আমাদের উইকেট নিষ্প্রাণ থাকে, অনেক বেশি আলগা বল পাওয়া যায়, এখানে তুলনায় বোলাররা ভালো। সব কিছু মিলিয়ে ব্যাটিং করাটা অবশ্যই কঠিন।’
নিজের অভিষেকের লগ্নে মিঠুনের ওই বক্তব্য থেকে আগাম মানসিক প্রস্তুতি তাই নিয়ে রাখতে পারেন সাদমান ইসলামও। সব শেষ জাতীয় লিগের সর্বোচ্চ স্কোরার বেশ কয়েক বছর ধরেই বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচ উপযোগিতার জানান দিয়ে আসছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রায় সব পর্যায়েই রান করে আসা এই তরুণের ৩০ নভেম্বর থেকে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শুরু হতে যাওয়া ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে শেষ টেস্টে অভিষেক প্রায় নিশ্চিত। কারণ একেই নতুন চোটে নাকাল তামিম ইকবালের ফেরা বিলম্বিত হয়েছে, তার ওপর ডান কাঁধের চোটে বিশ্রামে থাকতে হচ্ছে ইমরুল কায়েসকেও। উপায় না থাকায় এক বছর পর টেস্ট প্রত্যাবর্তনে শূন্য ও ১১ রান করা সৌম্য সরকারকেই ‘মন্দের ভালো’ হিসেবে আরেকটি সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এবং তাঁর সঙ্গে ওপেনার হিসেবে দ্বিতীয় টেস্টের স্কোয়াডে একমাত্র বিকল্প সাদমানই।
সৌম্য-সাদমান হতে চলেছেন এই বছর বাংলাদেশের খেলা আট টেস্টে পঞ্চম ওপেনিং জুটি। বছরজুড়েই যে জায়গাটায় সংকট রয়ে গেছে বাংলাদেশের। এর মধ্যে যে ম্যাচগুলোতে পারফরম্যান্সের ফুল ফুটিয়েছে বাংলাদেশ, তাতেও ওপেনিং জুটি উল্লেখযোগ্য কিছু দেয়নি। গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বছরের প্রথম টেস্টে তামিম ও ইমরুলের ওপেনিং জুটি দুই ইনিংসে দিয়েছিল ৭২ ও ৫২ রানের সূচনা। পরের ৬ টেস্টে ওপেনিংয়ে একটিই ফিফটি ছাড়ানো পার্টনারশিপ। সেটি এ মাসেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেট টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে লিটন কুমার দাশ ও ইমরুলের ৫৬ রান। ওই একটি ইনিংস বাদ দিলে সব শেষ ৬ টেস্টে ওপেনিং জুটির সর্বোচ্চ অবদান ২০ রানের। সেটি গত জুলাইতে দুঃস্বপ্নের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের দ্বিতীয় টেস্টে। যে সিরিজের দুই টেস্টেই ওপেন করেছিলেন তামিম-লিটন। চোটে তামিম ছিটকে পড়ায় জিম্বাবুয়ে সিরিজে বদল অবধারিতই ছিল। কিন্তু ফলাফল একই। জুটি বদলালেও ফল বদলায়নি ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে প্রথম টেস্টেও। চট্টগ্রামে দুই ইনিংসেই ওপেনিং জুটি দিয়েছে ১ ও ১৩ রান। তামিম-ইমরুল, তামিম-লিটন, লিটন-ইমরুল ও ইমরুল-সৌম্য হয়ে এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দেখা যেতে চলেছে সৌম্য-সাদমানের পঞ্চম ওপেনিং জুটি।
ব্যর্থ সৌম্যর সঙ্গে নবাগত সাদমান তাই অনন্ত চাপ নিয়েই নামছেন মিরপুর টেস্টে। নামার আগেই সতীর্থ মিঠুনের কাছ থেকে যাঁর জানা হয়ে গেছে যে এত দিনের চেনা জগৎ ঘরোয়া ক্রিকেট আর অচেনা টেস্টের ভুবন একেবারেই আলাদা। ‘টেস্ট’ তাই আক্ষরিক অর্থেই এই নবাগতের জন্য হয়ে উঠতে চলেছে পরীক্ষা। অবশ্য আরেকটি পরীক্ষা অপেক্ষা করে আছে দলের সিংহভাগ ব্যাটসম্যানের জন্যও। চট্টগ্রামে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে স্পিন সহায়ক উইকেট বানিয়ে ‘হোম অ্যাডভান্টেজ’ নেওয়া বাংলাদেশ জিতলেও প্রমাণিত হয়েছে সেটি দলের সব ব্যাটসম্যানের জন্যই ‘কমফোর্ট জোন’ ছিল না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিনারদের খেলতেও সমস্যার চিত্র ধরা পড়েছে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। এক মমিনুল হকের সেঞ্চুরি বাদ দিলে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৩০০ পেরোনো তো মূলত টেল-এন্ডারদের ব্যাটে চড়েই। সিরিজ জিততে তাই ওপেনিংসহ ব্যাটিং সংকটের সমাধান হওয়াও কম জরুরি নয়!