রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩১ অপরাহ্ন
ক্রীড়া প্রতিবেদক : ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১৫ জনের জন্যই ছিল প্রস্তুতির উপলক্ষ। বিসিবি একাদশের শুধু দুজনের। মাশরাফি বিন মর্তুজা ও তামিম ইকবাল। ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে সে প্রস্তুতি ভালোভাবেই সেরেছেন তাঁরা। প্রথমজন আঁটসাঁট বোলিং করে; পরেরজন বিস্ফোরক সেঞ্চুরিতে। তাঁদের বাইরে সৌম্য সরকারও দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে প্রথম ওয়ানডের একাদশে থাকার দাবি করেছেন জোরালো।
বিসিবি একাদশ-ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান্সের কালকের এই ম্যাচে মাশরাফি-তামিম-সৌম্যদের প্রস্তুতিটাই মুখ্য। সেখানে গৌণ হয়ে পড়ে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে বিসিবি একাদশের ৫১ রানের জয়।
বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে রান এসেছে স্রোতের মতো। আর তা দুই দলের ব্যাটসম্যানদের ব্যাট থেকেই। এর মধ্যেও মাশরাফির বোলিংয়ে চেনা সুর। নতুন বলে প্রথম স্পেলে চার ওভারে দেন ২০ রান। এর মধ্যে প্রথম তিন ওভারে মোটে ৬ রান। আর দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে পরের চার ওভারেও ১৭ রানের বেশি দেননি। তুলে নেন মারলন স্যামুয়েলসের উইকেট। আট ওভারে এক মেডেনে ৩৭ রান দিয়ে এক উইকেট—রাজনীতিতে নাম লেখানোর ডামাডোলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রস্তুতি মন্দ হয়নি মাশরাফির।
সতীর্থদের মধ্যে রুবেল হোসেন, মেহেদী হাসান, নাজমুল ইসলামরা দুই উইকেট করে পেয়েছেন বটে। তবে অধিনায়কের মতো রানের স্রোত আটকাতে পারেননি। ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান নাম নিয়ে খেলা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫০ ওভারে আট উইকেটে তোলে ৩৩১ রান। শাই হোপের ৮১, রোস্টন চেজের অপরাজিত ৬৫ রানে তাদের অমন রানপাহাড়ে চড়ে বসা। ৯ ওভারে ৭২ রান দিয়ে স্বাগতিকদের সবচেয়ে খরুচে বোলার সৌম্য।
ওয়ানডে সিরিজের আগে মাশরাফির প্রস্তুতি যথাযথ হলে তামিমেরটি বিস্ফোরক। এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইনজুরিতে পড়েন এই ওপেনার। আড়াই মাসের বেশি সময় পর কাল আবার ব্যাটিংয়ে। মাত্র ৭৩ বলে ১০৭ রানের ইনিংস কী রাজসিক সে প্রত্যাবর্তন! ১৩টি চার এবং চার ছক্কায় জানান দেন, ইনজুরি তাঁর সময়টাই শুধু কেড়ে নিতে পেরেছে। ফর্ম না। ইমরুল কায়েসের (২৭) সঙ্গে ৮১ রানের জুটিতে তামিমের শুরু, পরে সৌম্যর সঙ্গে ১১৪ রানের জুটিতেও তাঁর ব্যাটের প্রবল দাপট। তামিম আউট হওয়ার পর সৌম্য ইনিংস টেনে নেন শেষ পর্যন্ত। ৮৩ বলে সাতটি চার এবং ছয় ছক্কায় অপরাজিত ১০৩ রান এই ওপেনারের। বিসিবি একাদশ মাত্র ৪১ ওভারে ছয় উইকেটে ৩১৪ রানে পৌঁছে যাওয়ার পর আলোক স্বল্পতায় শেষ হয় খেলা। ডি/এল পদ্ধতিতে ৫১ রানে জিতে যায় মাশরাফির দল।
ওয়ানডে সিরিজের আগে প্রস্তুতি ম্যাচের প্রস্তুতিতে সন্তুষ্ট প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন, ‘প্রস্তুতি ম্যাচটি ভালো হওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। তামিম ইকবাল অনেক দিন পর খেলেছে; সেঞ্চুরি করেছে। এটা অনেক বড় ইতিবাচক দিক। আশা করছি টেস্ট সিরিজের মতো ওয়ানডে সিরিজেও ভালো করবে।’ সে সিরিজে টিম ম্যানেজমেন্টের টপ অর্ডার নিয়ে ‘মধুর সমস্যা’ আরো বাড়াল এ ম্যাচটি। তামিম-সাকিবের অনুপস্থিতিতে এ জায়গা নিয়ে সংশয় ছিল অনেক। এশিয়া কাপ ফাইনালে দুর্দান্ত সেঞ্চুরির পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও এক ম্যাচে ৮৪ রান করেন লিটন দাশ। সে সিরিজের তিন ম্যাচে দুই সেঞ্চুরি ইমরুলের; অন্যটিতে করেন ৯০ রান। তামিমের সঙ্গী হিসেবে এ দুজনের কাউকে বাদ দেবেন কিভাবে! কাউকে তিনে পাঠানোর উপায়ও তো নেই। গত কিছুদিন ধরে সেখানে থিতু হওয়া সাকিব ফিরবেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র ম্যাচে সুযোগ পেয়ে সৌম্য করেন সেঞ্চুরি। কালকের প্রস্তুতি ম্যাচেও তাই। এ কারণেই প্রধান নির্বাচক মিনহাজুলের মুখে হাসি, ‘বিকল্প ক্রিকেটারদের ভালো অবস্থানে থাকা দলের জন্য ভালো। এ ধরনের প্রতিযোগিতার মধ্যে থাকলে দল সব সময় ভালো অবস্থানে থাকে। যখন যাকে দরকার হবে, তাকে তখনই খেলানো হবে।’
টিম ম্যানেজমেন্টকে মধুর সমস্যায় ফেলা একজন সৌম্য প্রত্যাশিতভাবেই আত্মবিশ্বাসী। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে ভালো কিছু করার স্বপ্নই তাঁর, ‘আশা তো সব সময় বড় থাকে। আর স্বপ্ন বড় থাকাই তো ভালো। চেষ্টা করব যে ম্যাচগুলোতে সুযোগ পাব ধারাবাহিকতা বজায় রাখার।’ তামিমের ব্যাটিং দেখেও মুগ্ধ সৌম্য, ‘ব্যাটিং দেখে মনে হয়নি তামিম ভাই বেশ কিছুদিন খেলার বাইরে আছেন। উনি অনেক আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। আর তাঁর শুরুটা হয়েছে ভালো। তামিম ভাই এভাবে শুরু করতে পারলে তা বাংলাদেশের জন্যও ভালো, ওনার জন্যও ভালো।’
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান্স : ৫০ ওভারে ৩৩১/৮ (হোপ ৮১, চেজ ৬৫*, অ্যালেন ৪৮; রুবেল ২/৫৫, মেহেদী ২/৬৫)। বিসিবি একাদশ : ৪১ ওভারে ৩১৪/৬ (তামিম ১০৭, সৌম্য ১০৩*; চেজ ২/৫৭)। ফল : বিসিবি একাদশ ৫১ রানে জয়ী (ডি/এল পদ্ধতিতে)।