রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৮ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমদকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। ঘটনার সময় বুলবুলের সঙ্গে থাকা বান্ধবীর দেওয়া তথ্য ও আচরণে নানা সন্দেহ দেখা দিয়েছে। কিলিং মিশনে তিন জন অংশ নিয়েছে এমন তথ্য পুলিশকে জানিয়েছেন বুলবুলের বান্ধবী। তবে ঘটনার পর নিজের মোবাইলের কললিস্ট মুছে ফেলেন তিনি।
এর আগে মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) বিকালে হাসপাতাল থেকে গোপনে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে চলে যান বুলবুলের বান্ধবী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী।
এ হত্যাকাণ্ডে তার সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা নিয়ে তদন্ত চলছে। তবে তার দেওয়া তথ্যে গরমিল রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এজন্য মঙ্গলবার রাতে তাকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশের একটি দল। এ সময় ওই ছাত্রী পুলিশকে জানান, কিলিং মিশনে ছিল মাস্ক পরা তিন যুবক। তাদের তিনি চেনেন না। মাস্ক পরা তিন যুবক বুলবুলকে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। তবে রহস্যজনক কারণে ওই ছাত্রীকে কোনও আঘাত কিংবা মারধর করেনি তারা।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার পর ওই ছাত্রী তার মোবাইল ফোনের কললিস্ট মুছে ফেলেছেন। তার দেওয়া তথ্য ও কথাবার্তায় গরমিল রয়েছে।
এর আগে সোমবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ক্যাম্পাসের ভেতরে গাজীকালুর টিলায় বুলবুলের রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে খবর দেন শিক্ষার্থীরা। এরপর তাকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। বুলবুলের বাড়ি নরসিংদীতে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঘটনার পর সিলেট মহানগরের মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে ভর্তি হন বুলবুলের বান্ধবী। কিন্তু মঙ্গলবার বিকালে তিনি হাসপাতাল থেকে হঠাৎ ‘উধাও’ হয়ে যান। সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ করেও তার সন্ধান পাননি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সহপাঠীরা।
মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের পরিচালক শামীম আহমেদ বলেন, ‘হাসপাতালে ওই ছাত্রীর সঙ্গে তার একাধিক সহপাঠী ছিলেন। তার ওপর পুলিশও নজর রাখছিল। এসবের মধ্যে বিকালে গোপনে হাসপাতাল থেকে চলে যান তিনি। তাকে আমরা ছাড়পত্র দিইনি।’
এদিকে, মঙ্গলবার রাত পৌনে ৮টার দিকে তার সন্ধান পায় পুলিশ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিলেট পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হাসপাতাল থেকে পালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় হোস্টেলে অবস্থান নেন ওই ছাত্রী। সেখান থেকে তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। এরপর তাকে নিয়ে ঘটনাস্থল গাজীকালুর টিলায় যায় পুলিশ। পরে ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘ওই ছাত্রী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তিনি কাউকে কিছু না বলে মঙ্গলবার বিকালে হাসপাতাল থেকে চলে যান। পুলিশ তাকে নজরদারিতে রেখেছে। সেই সঙ্গে তার দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তদন্তে বেশ অগ্রগতি আছে। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করা হবে।’
বুলবুল আহমদ হত্যার ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার শাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আক্তারুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক আমিনা পারভীন, শাহপরান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান খান, লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম ও সহকারী প্রক্টর আবু হেনা পহিল।
তদন্ত কমিটির সদস্য শাবির ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক আমিনা পারভীন বলেন, ‘ঘটনার পর নিজের ব্যবহৃত মোবাইলের কললিস্ট মুছে ফেলেছে ওই ছাত্রী। তার মোবাইলের কললিস্টে কিছুই পাইনি আমরা। মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে তাকে আমরা হাসপাতালে দেখে এসেছি। এরপর খবর পাই, সে হাসপাতাল থেকে চলে গেছে। তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। পরে হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে দেখতে পাই, সে হাসপাতাল থেকে একাই বের হয়ে গেছে। হাসপাতাল থেকে চলে আসার অনেকক্ষণ পর পুলিশ সদস্যরা তার সন্ধান পান এবং প্রক্টরের কার্যালয়ে নিয়ে যান। রাত পৌনে ৮টার দিকে সেখান থেকে তাকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায় পুলিশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই ছাত্রী পুলিশকে জানায় বুলবুল আর সে ঘটনাস্থলে বসেছিল। হঠাৎ ওই স্থানে তিন যুবক আসে। সবাই মাস্ক পরা ছিল। তারা এসে বুলবুলকে একটু দূরে ডেকে নিয়ে যায়। এ সময় ওই ছাত্রী অন্যদিকে তাকিয়ে কাউকে ডাকতে চেষ্টা করছিল। এরপর বুলবুলের দিকে তাকালে দেখতে পায় ছুরিকাঘাত করে চলে যাচ্ছে তিন যুবক।’
তবে বুলবুলের সহপাঠীরা বলছেন, ওই ছাত্রীর সঙ্গে বুলবুলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। প্রেমের সম্পর্কের কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। ঘটনার পর হাসপাতালে ভর্তি, মোবাইলের কললিস্ট মুছে ফেলা এবং হাসপাতাল থেকে গোপনে চলে যাওয়ার ঘটনাগুলো প্রমাণ করে, বুলবুল হত্যায় তার সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। ভালোভাবে তদন্ত করলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে। ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি চান বুলবুলের সহপাঠীরা।