সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫২ পূর্বাহ্ন
ভিশন বাংলা ডেস্ক: মুক্তিযোদ্ধা কোটা মাত্রাতিরিক্ত উল্লেখ করে বিশিষ্ট লেখক, শিক্ষাবিদ ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, এর মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করা হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান অক্ষুণ্ন রাখতে কোটা সংস্কার জরুরি। তিনি বলেন, দেশের মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের এতো ভালোবাসে, এতো সম্মান করে; মুক্তিযোদ্ধা কোটা যদি একটা সহনীয় পর্যায়ে থাকতো তাহলে মুক্তিযোদ্ধারা অসম্মানিত হতেন না।
বাস্তবসম্মত করে সকল কোটা সংস্কার করা প্রয়োজন। মুক্তিযোদ্ধা কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা ও আদিবাসী কোটা ছাড়া অন্য যেসব কোটা রয়েছে, সেসব কোটার পক্ষে তিনি নন বলেও জানান জাফর ইকবাল।
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা ও আদিবাসী কোটার সংখ্যা খুবই কম। এগুলো ছাড়া অন্য যেসব কোটা রয়েছে সেসব কোটার পক্ষের মানুষ আমি না। তবে আমি একা বললে তো হবে না। এটা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেবে।
সারাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলন সম্পর্কে সোমবার এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।
ড. মুহাম্মদ জাফল ইকবাল বলেন, সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে যে কোটা রয়েছে, তা অতিরিক্ত। সংস্কারের মাধ্যমে কোটা পদ্ধতি বাস্তবসম্মত পর্যায়ে নিয়ে আসা দরকার।
তিনি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কোটা প্রচলিত রয়েছে। কোন পার্টিকুলার গ্রুপ যদি পিছিয়ে পড়া থাকে, অবহেলিত থাকে, তবে সেই গোষ্ঠীকে সামনে নিয়ে আসার জন্য কোটার প্রচলন করা হয়। তবে তা অবশ্যই নিয়মের মধ্যে হতে হবে। এর পরিমাণ সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে, যুক্তিপূর্ণ হতে হবে, লজিক্যালি হতে হবে, দেশের স্বার্থের সাথে ডিপেন্ডেড হতে হবে। কিন্তু যদি মনে হয় এর পরিমাণ বেশি হয়ে গেছে তবে সেটা পরিবর্তন করা দরকার।
কোটা যত কম ততই ভালো মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের দেশের কোটার মতো অন্য কোথাও এত সংখ্যক কোটা নেই। এই পরিমাণ কমিয়ে নেওয়া উচিত। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, শিক্ষক হিসেবে যেকোনো শিক্ষার্থী বা মানুষের ওপর পুলিশের হামলা আমাদের ভালো লাগে না। এটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। এই পর্যায়ে আসার আগেই এটা এড্রেস করা উচিত ছিল। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কোটার বিরুদ্ধে কথা বলছে না। তারা সংস্কার চাইছে। পৃথিবীর সকল দেশেই প্রতিনিয়ত সংস্কার হয়। বাংলাদেশের কোটাও সংস্কার করা দরকার।
এদিকে, সারা দেশে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা জানিয়ে এবং ঢাকায় বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনে নেমেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সোমবার সকাল ৭টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে তারা দিনব্যাপী প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু করে। ফলে শিক্ষা কার্যক্রম অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে। সকাল সাড়ে ৭টায় শাখা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিন ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান খানের নেতৃত্বে কয়েকজন নেতা এসে আন্দোলনকারীদের প্রধান ফটক থেকে উঠিয়ে দেয়। তবে এসময় কোনো সংঘর্ষ বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ছাত্রলীগ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রধান ফটক থেকে উঠিয়ে দিলে তারা ফটকের দুই পাশে অবস্থান নেয়। তবে ছাত্রলীগের প্রথম সারির নেতারা বাদে অন্য নেতাকর্মীদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। সকাল থেকেই বিভিন্ন বিভাগের পূর্বনির্ধারিত ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিল। বাস চলাচল করলেও কোনো শিক্ষার্থীদের বাসে উঠতে দেখা যায়নি।
আন্দোলনে বাধা প্রদানের বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান বলেন, অহিংসভাবে নৈতিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অধিকার সকলেরই রয়েছে। আমরা তাদের (আন্দোলনকারীদের) শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করার কথা বলেছি। ‘আন্দোলনে বাধা প্রদান করছেন’ শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জহীর উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা তো তাদের আন্দোলনে অফিসিয়ালি কোনো সাপোর্ট দিতে পারি না। দিলে সেটা হয়ে যাবে রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে। তবে আমরা তাদের কোনো বাধা দেইনি।