শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩০ পূর্বাহ্ন
ভিশন বাংলা নিউজ: কোনো বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক সন্তান প্রসবে অপ্রয়োজনে সিজারিয়ান অপারেশন করলে সেটি বন্ধ করে দেয়ার হুঁশিয়ারি এসেছে সরকারের পক্ষ থেকে।
রবিবার সচিবালয়ে সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন প্রতিমন্ত্রী। জানান, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সিজারিয়ান অপারেশনে সন্তান জন্মের হার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ। কোথাও কোথাও তার চেয়ে বেশি। অথচ এটা হওয়ার কথা ছিল সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ।
সিজারিয়ান অপারেশন বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন। এটা নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করছি।’
‘এটা কমাতে আমরা ইতিমধ্যে একটি ফরম করেছি। যদি কোনো প্রাইভেট হাসপাতালে সিজারিয়ান হয় তাহলে তার বিষয়ে বিস্তারিত জবাবদিহি করতে হবে।’
এ ক্ষেত্রে রোগীর কোন কোন সমস্যার কারণে সিজারিয়ান করা হলো, তা উল্লেখ করতে হবে।’
স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে ঝুঁকি থাকলে পেট কেটে সন্তান বের করে আনা হয়। একে বলে সিজারিয়ান অপারেশন। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে কোনো রকমের ঝুঁকি ছাড়াই এই অপারেশন করার প্রবণতা তৈরি হয়েছে।
২০১৭ সালে সরকারি এক জরিপে দেখা গেছে দেশে স্বাভাবিক প্রসব ৬২ দশমিক ১ শতাংশ আর সিজারিয়ান ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশ এবং অন্যান্যভাবে ২ দশমিক ৫ শতাংশ সন্তানের জন্ম হয়।
ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে বা বিডিএইচএস-এর তথ্য অনুসারে, ‘২০০৪ সালে সিজারের মাধ্যমে সন্তান হতো ৪ শতাংশ, ২০০৭ সালে তা বেড়ে হয় ৯ শতাংশে। ২০১১ সালে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ শতাংশে৷ আর ছয় বছরে এই সংখ্যাটি বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।’
মোট সন্তানের মধ্যে ৩৫ শতাংশ সিরাজিয়ান অপারেশনে জন্ম-এই হিসাবে ঘরে সন্তান প্রসব করা শিশুদেরকেও ধরা হয়েছে। আর বিডিএইচএস-এর তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ১০টির মধ্যে ছয়টি শিশুরই জন্ম হচ্ছে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে৷ বেসরকারি হাসপাতলে এই সংখ্যা আরও বেশি, ৮০ শতাংশ।
২০১৫ সালে প্রকাশিত স্বাস্থ্য বার্তায় বলা হয়েছে, যেসব বাচ্চার জন্ম সিজারিয়ানে হয়েছে, তাদের ৮০ শতাংশরই স্বাভাবিক প্রসব করানো যেত। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্মদান প্রায় আট গুণ বেড়েছে৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, একটি দেশে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব হার ১০-১৫ শতাংশের মধ্যে থাকা উচিত৷
বেসরকারি হাসপাতালগুলো বাচ্চা প্রসবের ক্ষেত্রে প্যাকেজের ব্যবস্থাও করেছে। প্রসূতি বা তার স্বজনদেরকে জিজ্ঞেস করা হয় তারা কোনটা চান। অথচ সিরাজিয়ান অপারেশন লাগবে কি না, এটি প্রসূতি বা তার স্বজনদের সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয় না।
সিজারিয়ান অপারেশন করলে স্বাভাবিক প্রসবের তুলনায় বেশি টাকা পাওয়া যায় বলে চিকিৎসকদের একটি বড় অংশ কোনো বিচার বিবেচনা ছাড়াই সিজারিয়ান অপারেশনের দিকে ঝুঁকছেন। এতে সন্তান প্রসবের সময়ও লাগে কম।
কিন্তু অপারেশনের পর মায়ের শরীরে প্রভাব পড়ে দীর্ঘমেয়াদী। আর সন্তানের ওপরও সিরাজিয়ান অপারেশনের প্রভাব থাকে। নানা গবেষণায় দেখা গেছে, সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে জন্ম হয়েছে এমন শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনকি বুদ্ধিমত্তা স্বাভাবিক জন্ম হয়েছে এমন শিশুর তুলনায় কম থাকে।
আবার সম্প্রতি একটি হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন করতে গিয়ে বাচ্চার মাথা কেটে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি উচ্চ আদালত পর্যন্ত ঠেকেছে।
গত ৫ এপ্রিল সচিবালয়ে এক সভা শেষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের জানান, সিজারিয়ান অপারেশন করতে হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে একটি ফরমে সব কিছু লিপিবদ্ধ করতে হবে। এটা সরকার যাচাই বাছাই করে দেখবে, সিজারিয়ান অপারেশন প্রয়োজন কি না।
এই উদ্যোগে কী প্রভাব পড়েছে-জানাতে চাইলে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এতে আমরা ফল পাচ্ছি। বলে রাখছি, যদি অপ্রয়োজনে কোনো প্রতিষ্ঠান সিজারিয়ান করে তাহলে তা প্রয়োজনে বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
‘সিজারিয়ান করলে একজন মায়ের নানা ধরনের ক্ষতি হয়। তাকে দুর্বল করে দেওয়া হয়।’
সোমবার নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালনকে সামনে রেখে গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হন প্রতিমন্ত্রী। জানান, দিবসটিতে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে সকালে একটি শোভাযাত্রা বের হবে। বিকালে হবে আলোচনা সভা।
নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নানা উদ্যোগ রয়েছে। এর একটি হলো কমিউনিটি ক্লিনিক। এখানে মায়েরা সেবা নিয়ে থাকেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার সেন্টার রয়েছে প্রায় চার হাজার। সেখানে প্রসব কার্যক্রমসহ নানা কাজ হয়ে থাকে।
প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় সরকারি পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রগুলোতেও স্বাভাবিক প্রসবের পাশাপাশি সিজারিয়ানের ব্যবস্থা রয়েছে।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রায় ৩০ হাজার স্যাটেলাইট ক্লিনিক রয়েছে। যার মাধ্যমে মায়েদের নানা চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের এই ক্লিনিকের কর্মীরা শুধুমাত্র ক্লিনিকে বসে থাকেন না বরং তারা মায়েদের নিকট চলে যান এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।’
‘মায়েদের বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু রয়েছে। সরকার মাতৃত্বকালীন ভাতাও দিয়ে থাকে। এটা ভালো কাজ দিচ্ছে।’
সরকার ইতিমধ্যে ১৫ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছে জানিয়ে জাহিদ মালেক স্বপন বলেন, ‘এটা নিরাপদ মাতৃত্বে ভাল ভূমিকা রাখবে।’
‘এখন আমরা মায়ের জন্য ছয় মাসের ছুটির ব্যবস্থা করেছি। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার নির্মাণ করেছি। প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমরা বাধ্য করছি এ ধরনের উদ্যোগ নিতে।’