শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৬ অপরাহ্ন
গোধুমের মাঠ পার হয়ে শিশিরে সিক্ত সিহরণে আর আমি হলুদ গুল্মের দেশে যাবো— মধুমাছি গুনগুন শ্যামল স্নিগ্ধ মেঠো এক নদী পারে রাখালের উষ্ণতা কেড়ে তীর-চরাচর আর আমি ছড়াবো বিদ্যুৎ…
ফাগুনের বর্ণিল বায়ু এসে করে যাবে মধুস্বর ধ্বনি— শিমুলের ডালে ডালে সুবর্ণকীর্তন হবে ভ্রমরের— ঘুড়ি লাটিমের সাথে শেষ হবে লুকোচুরি পাঠশালা; বকুলের গন্ধমদির মোহনায় আর আমি এঁকে যাবো স্বর কিছু— অচকিত অবিকল মেঘেদের: হৃদয়ের বশে সুচরিতা ভিজে নিবে দুপ্রহর— আমাদের ভাটি ও ভাঙণের দেশে…
টেনেহেঁচড়ে ওরা আমাকে উলঙ্গ করেছে— স্তনগুটি, চর্মসন্ধি, লিঙ্গ ও লালা— এসব দৃশ্যমান কদর্যতা ছাড়া ওরা যে কিছুই খুঁজে পাবে না এ বিষয়ে একজন পূর্বেই বলেছিল, আসলে ওরা হটে নি।
আমার অপরাধের বিষয়ে নাকি এমনই সিদ্ধান্ত করেছে, তাই যুগপৎ হস্তসঞ্চালন শুরু হলো । নিরূপায় বিষ হজমের বশে এক পর্যয়ে বলে ফেললাম: এই হস্তক্ষেপ তোমাদের আত্মবিকারকে লোকে লোকে প্রচার করে দিবে। আমি তো কেবল মাংসের আবরণে মোড়া হস্তিশাবক নই, পারো যদি মন ও দেহের অসম্প্রীতি দূর করে দাও তখন সব সম্মত হবে, সবি সম্মত হবে; বলতে বলতে চিৎকার চলে আসে
দেখলাম— ওদের ষষ্ঠজন দমে গিয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে আর বাকীরা মাংসের নগ্ন-প্রকোপ থেকে এতটুকু না সরে কর্ণপাতহীন মেতে উঠলো…
কেউ বাহুতে বেঁধে রেখে চায়, গোপন সজ্জায় নিয়ে শোয়ে-সংশয়ে— মুগ্ধ মাতমের বশে
তবু কিছু সুখি হতে— আহা প্রেম, তোমারি পরাজয়!
কেউ বাঁধে চুলে, সিক্ত খোঁপার সাজে পাখিটির কামনা কুড়ায়
বুক পেতে—স্পর্শ কোমল ঢেলে, মেলে ধরে গুপ্ত-মদক
আহা প্রেম, তোমারি পরাজয়!
এই হৃত পুরাণের প্রতি প্রাণফেলে মিছে মিছে প্রহরে প্রহরে
প্রণয়ের অবেদন পড়ে যাও— হায় হলায়ুধ!
মিছে কেনো ওরা প্রেমের নাম করে মোহের ব্যর্থ নাচে পৃথিবীতে রাস করে যায়—
সময়ের সাথে, দৃষ্টি আর জান্তব হৃদয়ের সাথে!
আমায় ফোটাতে চেয়েছিলো ফুলদল
গুল্মবীথির অচিন পুষ্পবালা
ঊর্ধ্ব আকাশ— সুপ্তির হোমা পাখি
পাঠাতে চেয়েছে প্রিয়গন্ধের মালা।
হৃদয় কাঁপছে বিচ্ছেদ ব্যতিহারে
আশার উঠোনে কোথা যেনো ভয়বিধি
তবুও ফাগুন পেয়েছি ঊষার খেলা
তবুও জীবন— বকুল পুষ্পনিধি।
দেখেছি করাল ইনানী পাথার থেকে
মন চলে গেছে শৈল-সুধীর বনে
চলে গেছে মন আঙ্গণের মেঠোপথে
স্বপ্নের রথে— অমরার গানে গানে…
মন্দ-নিষেধ জোট বেঁধে শাপ-জ্বালা
বিষাদ করেছে বাসনার প্রেমহার
তবুও জীবন ভাটি-জল-পারাপার
রাতভর গান— প্রীত জোসনার পালা।
জানালার একটুখানি পাড় খুলে দেখি
জাহাজটা ভালোবাসা মানে খুব
তার প্রেম ভার কেটে চলে—
পলকা হতে হাওয়ায় হাওয়ায়
অশান্ত সোহাগে বুঝি তার
মাঝরাতে ঘুমিয়ে গ্যালো জলের নিনাদ
তখন নিজের নিয়ম মেনে আমরাও পাল্টেফেলি পাশ
আমরাও তীর্থজলে নামি
বিস্তারিত জোসনায় থেকে থেকে
ফুটে ওঠে জলের জলসা
বিচ্ছিন্ন ভাবনার মতো দেখি হারিয়ে যাচ্ছে—
দ্রুতগামী ক্ষুদ্র পাখিরা
তুমিও পূর্বমুখ, বুকেবুক উষ্ণ-গোলাপ
মুখোমুখি— কটির কলহ লাগে
অপূর্ব অস্ফূট স্বর আর সিক্তনাদ
কিছু দিন মরতে গেছে মাষ ক্ষেতে
কিছু দিন কণ্ঠে ছিল ছুরি
কিছু দিন বিহারের পালা— নিশিভর ফাগুনীয়া গান
কিছু দিন হানাহানি নাগ ও কালকূট— নগ্ন কপোল জুড়ে ছোঁয়া
কিছু দিন অবরোধ কড়াকড়ি দাঙ্গা দাহন
কিছু দিন শ্রান্ত পরিযান
কিছু দিন পরবাসে— পুড়েছিল কামল কানন
কিছু দিন অনাহার অশ্রুপাত
কিছু দিন মুকুলিত নদী—বয়েছিল বিপরীত স্রোতে
কিছু দিন বিমার ছেয়েছে লোক
এই কিছু দিন, আরও কিছু দিন প্রিয়তম—
তোমার স্বাক্ষাতে যাবো
সুর ও সুরভির পাশে মাঝরাতে আগুন জ্বালাবো
রমণের ওম রাগে ছাই হবে কাছের বনানী।
আরো দিন, হে বাঁশি—
আরো কিছুদিন বেঁকে আছে হাড়ের সজ্জায়—
অনিবার রুগ্ন ব্যসনের প্রতি
তবু তুমি ফেলে যাও নাদ— অনাহত, আর্দ্র, আবিল…
(একজন রবীন্দ্রশিল্পীর প্রতি)
দেখুন অদিতি, আপনার কণ্ঠে কেমন টানটান চৈত্রমাস
যেনো তেঁতে ওঠা ফলাটির দিকে ওর দৃষ্টি
বিক্ষেপে ঝরে যাবে রঙিন ফুলেরা
বাধ্য হয়ে যে যার সাধ্যমতো খুলে নেয় পোষাক-আষাক
মগ্ন হয় ত্রিমাতৃক রাতের সংযমে
অদিতি, কবিরা একটু করুণার লোভে
কত কষ্টেই না শব্দ-স্বরূপে তুলতে চায় সুকণ্ঠ পাখিসহ সবুজের সময় যাপন
তবু নারীর মমতা যেনো কাছ থেকে দূরে, আরো দূর দ্বিধার গোলকে
অদিতি, এমন জ্বর হলে বুঝি শুশ্রুষা নেই!
লাল-নীল-হলুদ-সবুজে ঘেমে ওঠে উদ্ভিন্ন-দেহ
পড়ুন, ক্ষয়ে যাচ্ছে সবটুকু জয়-জল
পড়ুন, এখনই তারা-শীর্ষ থেকে আপনার উষ্ণবাক্— শাণিত সংগীত।