শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৮ পূর্বাহ্ন
ভিশন বাংলা ডেক্স: আপনি কি আজ অন্তত কিছুটা পথ হেঁটেছেন? অফিসে কাজ কি চেয়ারে বসে করতে হয়, নাকি হাতে-কলমে করতে হয়? আজ কোন খেলাধুলা করেছেন কি?যদি এর উত্তর ‘না’ হয়ে থাকে – তাহলে কিন্তু আপনার হৃদরোগ, ডায়াবেটিস বা ক্যান্সারের মত রোগের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে অকালে মৃত্যুর ঝুঁকি।
এক জরিপের পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, শারীরিকভাবে যথেষ্ট সক্রিয় না হবার কারণে পৃথিবীর এক-চতুর্থাংশেরও বেশি লোকই নানা গুরুতর রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।তাই পৃথিবীর প্রায় দেড়শ’ কোটি লোকই এখন হয়তো অকালে অর্থাৎ স্বাভাবিক বয়েসের আগেই মারা যেতে পারেন, এমন সম্ভাবনা আছে – বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।জরিপের রিপোর্ট বলা হচ্ছে, যারা শারীরিকভাবে সক্রিয় নয় বা ব্যায়াম করে না তাদের হৃদরোগ, টাইপ-টু ডায়াবেটিস এবং কয়েক ধরণের ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশি।ল্যানসেট গ্লোবাল হেল্থ জার্নালে প্রকাশিত এই জরিপটিতে ২০ লক্ষ অংশগ্রহণকারীর উপাত্তের বিশ্লেষণ করা হয়েছে।পৃথিবীর ১৬৮টি দেশের মধ্যে ১৫৯টিতেই দেখা যায়, যথেষ্ট শারীরিক সক্রিয়তার অভাব পুরুষদের চেয়ে মেয়েদের মধ্যেই বেশি। কিছু দেশে এ পার্থক্য ১০ শতাংশের মতো।বাংলাদেশ সহ ৯টি দেশে পুরুষ ও নারীদের মধ্যে যথেষ্ট শারীরিক সক্রিয়তার মাত্রার পার্থক্য ২০ শতাংশেরও বেশি।অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবযাত্রা বদলে যাচ্ছে, বলছেন এ জরিপের পবেষকদের একজন ড: ফিওনা বুল।তিনি বলেন, মানুষ এখন কম হাঁটে, কম সাইকেল চালায়, সব মিলিয়ে মানুষের শারীরিক চলাফেরা, তৎপরতা এখন অনেক কমে গেছে।”বিশ্বায়ন, নগরায়ন – এ সব কিছুর প্রভাবে মানুষ যেভাবে কাজ করে, যেভাবে যাতায়াত করে, সেটা পর্যন্ত বদলে যাচ্ছে।”এতে দেখা গেছে, আমেরিকানদের মধ্যে ৪০ ভাগই যথেষ্ট শারীরিক পরিশ্রমসাধ্য কাজ করে না। সউদি আরব ও ইরাকে পরিস্থিতি আরো খারাপ। সেখানে অর্ধেকেরও বেশি মানুষের কোন শারীরিক তৎপরতাই নেই।দক্ষিণ এশিয়ায় ৩৩ শতাংশ লোকই শারীরিকভাবে যথেষ্ট সক্রিয় নন। পুরুষদের মধ্যে ২৩ শতাংশ এবং মেয়েদের মধ্যে ৪৩ শতাংশ এ কাতারে পড়েন।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশমালা অনুযায়ী সুস্বাস্থ্যের জন্য মানুষের প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মাঝারি থেকে উচ্চমাত্রার শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করা প্রয়োজন।এই প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার অবস্থা সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। অর্থনীতি এবং জীবনযাত্রার এই পরিবর্তন বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্যের ওপরও কি একই ধরণের প্রভাব ফেলছে?ঢাকার রোগতত্ত্ব ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ড মাহমুদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে এখন ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হৃদরোগ, শ্বাসতন্ত্রের রোগ – এগুলো প্রকোপ বাড়ছে। এরকম অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর পরিমাণও বেড়েছে।তিনি বলছেন, এখন রাস্তায় হাঁটার মতো ফুটপাতের অভাব, নিরাপত্তা ইত্যাদি কারণে শারীরিক সক্রিয়তা কমে যাচ্ছে।”গ্রামেও এখন হাঁটার পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এর ফলে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। এসব ব্যাপারে সচেতনতা তৈরির কিছু কার্যক্রম আছে কিন্তু তা যথেষ্ট নয়।””বিশেষ করে মহিলারা – তারা বাড়িতে থাকেন, সারা দিন কাজ করেন – কিন্তু ফিজিক্যাল এ্যাকটিভিটির যে সংজ্ঞা তার মধ্যে এগুলো পড়ে না” – বলেন ড. রহমান।”এর জন্য বিভিন্ন রকম উদ্যোগ দরকার। মাঠের ব্যবস্থা, খেলার ব্যবস্থা, হাঁটার ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার।”