মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩১ পূর্বাহ্ন
ডেস্ক নিউজঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ গত ১০ বছরে জনগণের সেবক হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে বলেই মানুষ ভোট দিয়ে নির্বাচনে আবারও বিজয়ী করেছে। জনগণ বুঝতে পেরেছে শুধু আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলেই তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়, দেশের উন্নয়ন হয়। দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এটি মনে করে বলেই সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে তারা নির্বিশেষে সমর্থন দিয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আটটি আসন পাওয়া বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সংসদে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি মনোনয়ন বাণিজ্য না করলে হয়তো আরো কয়েকটি আসন তারা (ঐক্যফ্রন্ট) পেতে পারত। তার পরও যে কয়টি আসনে তারা জিতেছে, গণতন্ত্রের স্বার্থে তারা যদি চায়, তাদের এই পার্লামেন্টে আসা প্রয়োজন।
গতকাল শনিবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের যৌথ সভার সূচনা বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব এ কথা বলেন। সূচনা বক্তব্যের পর রুদ্ধদ্বার সভা অনুষ্ঠিত হয়। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রথমবারের মতো দলীয় নেতারা আনুষ্ঠানিক এ যৌথ সভায় মিলিত হলেন। এতে বেশির ভাগ নেতা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গণভবনে ২০১৮ সালের ৬ জুলাই যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আরো পাঁচ বছরের জন্য আমরা ম্যান্ডেট পেলাম। বাংলাদেশের ইতিহাসে আওয়ামী লীগই দীর্ঘ সময় রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে। জনগণ সে আস্থা, বিশ্বাস রেখেছে। কাজেই জনগণের প্রতি আমাদের কর্তব্য অনেক বেড়ে গেছে। আমাদের এখন একটাই চিন্তা করতে হবে যে আমরা যেসব কর্মসূচি হাতে নিয়েছি সেগুলো যেমন বাস্তবায়ন করতে হবে, তেমনি বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য আরো কী কী করতে পারি, সে সিদ্ধান্তও নিতে হবে।’
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণের জন্য স্বর্ণযুগ ছিল দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিন্তু ষড়যন্ত্র কখনো থেমে যায় না। ২০০১ সালে চক্রান্ত করে আমাদের ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি। আমরা ভোট বেশি পেলাম; কিন্তু সরকার গঠন করতে পারলাম না। ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষের জীবনে যে দুর্বিষহ অবস্থা ছিল, সেটা আমরা সবাই জানি। সেটা নিয়ে আর আমার বেশি বলার প্রয়োজন নেই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৮ সালে আমরা সরকার গঠন করার পর থেকে আমাদের যেটা লক্ষ্য ছিল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ে তুলব এবং দেশের প্রত্যেক মানুষের কাছে স্বাধীনতার সুফল পৌঁছাতে পারে, সেভাবে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেছি বলেই মানুষের এই উপলব্ধিটা এসে গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার থাকলে তারা ভালো থাকে, তাদের জীবনমান উন্নত হয়। তাদের দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত হতে হয় না। তারা শান্তিতে থাকতে পারে। তাদের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়, এটা তারা উপলব্ধি করতে পারে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১৪ সালে আবার আমরা সরকার গঠন করি। আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা একটানা ১০ বছর হাতে সময় পেয়েছিলাম; যার ফলে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটা উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনায় আমরা জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করতে পেরেছি। তার ফলে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জয়লাভ করতে পেরেছি।’ টানা তৃতীয় মেয়াদে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের সুযোগ পাওয়ায় তিনি দেশের সব স্তরের মানুষের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ এবং ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি মনোনয়ন বাণিজ্য নিয়ে নিজেদের মধ্যে কোন্দল-মারামারি করেছে। বিজয়ী হওয়ার মতো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়নি। সকালে একজন, বিকেলে আরেকজনকে মনোনয়ন দিয়েছে। মানুষ জানতে পেরেছে এদের চরিত্রটা কী। এদের চরিত্র শোধরায়নি। বাংলাদেশের জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। দলটির প্রধান দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত, যাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান করা হয়েছে, সে-ও খুনি, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা ও দুর্নীতির মামলায় বিদেশে পলাতক, তখন তাদের এমন ফল বিপর্যয় স্বাভাবিক।’
শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা মাঠে-ঘাটে, টেলিভিশনে দেখেছেন কিভাবে তারা প্রচেষ্টা চালিয়েছিল নির্বাচনটা যেন বানচাল করা যায়। কিন্তু তা তারা পারেনি। এখন বিএনপি নির্বাচনে হেরেছে, এই দোষটা তারা কাকে দেবে? দোষ দিলে তাদের নিজেদের দিতে হয়। কারণ একটি রাজনৈতিক দলের যদি নেতৃত্ব না থাকে, মাথাই না থাকে, তাহলে সেই রাজনৈতিক দল কিভাবে নির্বাচনে জয়ের কথা চিন্তা করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটুকু বলতে পারি যে আমরা যখন সরকারে এসেছি, আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছি, জনগণের জন্য কাজ করেছি। আমরা কিন্তু কোনো রিভেঞ্জ নিতে চাইনি বা আমরা কাউকে কোনো হয়রানিও করতে যাইনি। তাদের কৃতকর্মের জন্য বা দুর্নীতির জন্য যে মামলা হয়েছে সে মামলা আপন গতিতে চলবে। বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। কাজেই সেভাবেই চলবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, এবারের নির্বাচনে সব থেকে লক্ষণীয় বিষয় ছিল, মানুষের মধ্যে একটা স্বতঃস্ফূর্ততা এবং ভোট দেওয়ার জন্য আগ্রহ। বিশেষ করে এ দেশের তরুণসমাজ, যারা প্রথম ভোটার এবং নারীসমাজের। এবারের নির্বাচনটা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে হলেও কিছু জায়গায় বিএনপি-জামায়াত জোট মিলে কোথাও ব্যালট বাক্স ছিনতাই করতে গেছে। কোথাও তারা নির্বাচনকে বানচাল করার চেষ্টা করেছে এবং তাদের এই অপকর্মের কারণে বেশ কিছু প্রাণহানি ঘটেছে, যার মধ্যে দলীয় নেতাকর্মী অনেক আছে।
বক্তব্যের শুরুতে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোক প্রকাশ করা হয়।
১৯ জানুয়ারি মহাসমাবেশঃ আগামী ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। গতকালের যৌথ সভায় আরো জানানো হয়, ২০২০-২১ মুজিব বর্ষ পালন করবে আওয়ামী লীগ। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ পূর্ণ হবে। এ উপলক্ষে ওই বছর থেকে পরের বছর ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত ‘মুজিব বর্ষ’ পালন করা হবে। ওই বছর মার্চে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীও পালন করবে সরকার।
সভায় সিপিবি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তাব দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মুকুল বোস। তিনি বলেন, তাঁরা সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, নির্বাচনে আগেই বাক্স ভরা ছিল। এই মিথ্যা অভিযোগের জন্য সিপিবি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হোক। কিন্তু তাঁর এই প্রস্তাব নাকচ করে দেন শেখ হাসিনা।
সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদের নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় নির্বাচনের অ্যাচিভমেন্ট উপজেলা নির্বাচনেও ধরে রাখতে হবে। এ জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। একের অধিক প্রার্থী হওয়া যাবে না।