রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৫০ পূর্বাহ্ন
জার বা বোতলজাত পানির নামে আমরা কী পান করছি এই প্রশ্ন দীর্ঘদিন থেকেই সামনে চলে আসছে। এই পানির বেশির ভাগই যে দূষিত এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। খোলা কলের দূষিত পানি ভরে বিক্রি ও বাজারজাত করছে একশ্রেণির অসৎ মানুষ, যা মানুষের জীবনঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। এই পানি পান করে অনেকেই দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছেন অনেকটা প্রতিকারহীনভাবে। পয়ঃনিষ্কাশনের বর্জ্য, নর্দমা ও ড্রেনের ময়লাসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকারক পদার্থ মিশে সেই পানি বিষাক্ত হয়ে আছে। এটাকে পরিশোধন করতে অনেক সময় মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহারের ফলেও রোগ-ব্যাধি বাড়ার আশঙ্কা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনোরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই এসব পানি পান করায় মানবদেহে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ-জীবাণু বাসা বাঁধছে। মানবদেহে শতকরা ৭৫ ভাগ রোগের কারণ হলো দূষিত পানি। সুপেয় পানির অভাবে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, কলেরা, জন্ডিস, আমাশয়, হেপাটাইটিস বি-ভাইরাস, চর্মরোগ ও মরণব্যাধি ক্যান্সারের মতো বড় রোগ-বালাই বাড়ছে।
এক জরিপে দেখা যায়, ঢাকায় বসবাসরত জনগোষ্ঠীর মধ্যে শতকরা ৫৫ ভাগই বিশুদ্ধ পানি পান না। তাই সুপেয় পানির অভাবে খোলা জারে যত্রতত্র সরবরাহকৃত পানি ব্যবহারে নিজের অজান্তেই মানবদেহে মারাত্মক রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। ওয়াসার পানির প্রধান উৎস গভীর নলকূপ। যা থেকে প্রায় ৮০ ভাগ পানি সরবরাহ করা হয়। কিন্তু রাজধানীবাসীর পানির চাহিদা পূরণের জন্য প্রতিদিন প্রায় ২৩০ কোটি লিটার পানির প্রয়োজন, সেখানে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করতে পারছে প্রায় ২১০ কোটি লিটার। ফলে নদী বা বোতলজাত পানির ওপর ভরসা করছেন অনেকেই। যাতে ভয়াবহ আকারে ধারণ করছে রোগ-বালাই। সুপেয় ও নিরাপদ পানি সরবরাহের কথা বলে অনেক সময় ব্যবসায়ীরা ফিটকিরি ও চুনজাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করে পানি বিশুদ্ধ করছে। শুধু ঢাকা শহরেই প্রতিদিন প্রায় ৩০ হাজার পানির জারে বিশুদ্ধ পানির পরিবর্তে অপরিশোধিত পানির ব্যবসা চলছে এবং বিশুদ্ধ পানি বলে প্রতারিত করছে সাধারণ মানুষকে। যদিও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, দেশের ৮৭ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানির সুবিধা ভোগ করছে। সোমবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে সরকারি দলের সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ তথ্য জানান। মন্ত্রীর এই দাবি কতখানি সত্য তা প্রশ্নসাপেক্ষ।
আশার কথা, অনুমোদন না নিয়ে বা সঠিকভাবে মান নিয়ন্ত্রণ না করে জারের পানি বিক্রি বন্ধে রাজধানীর পল্টন ও মতিঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়েছে সরকারের মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিএসটিআই। সোমবার ভোর থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলা এ অভিযানে ১২টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় চার হাজার জার বাজেয়াপ্তের পর ধ্বংস করে দেয়া হয়। এ সময় ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা জরিমানা করে বিএসটিআইর ভ্রাম্যমাণ আদালত।
আমরা মনে করি কেবল জার ধ্বংস করলেই হবে না। যারা এই অসৎ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সর্বত্র ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করতে হবে। কারণ এটা মানুষের জীবন নিয়ে খেলার সামিল। আমাদের প্রত্যাশা, সরকার ও সংশ্লিœষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং এর কোনো বিকল্প নেই।